হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
হেমচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৩৮ সালের ১৭ই
এপ্রিল হুগলি জেলার গুলিটা
রাজবল−ভহাট গ্রামেজন্মগ্রহণ করেন। তাঁর
পিতা কৈলাশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
পড়াশোনা
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার খিদিরপুর বাংলা স্কুলে পড়াশোনাকালে
আর্থিক সংকটে পড়েন।
ফলে তাঁর পড়াশোনা তখন
বন্ধ হয়ে যায়।
অতঃপর কলকাতা সংস্কৃত কলেজের
অধ্যক্ষ প্রসনড়বকুমার সর্বাধিকারীর আশ্রয়ে তিনি ইংরেজি
শেখেন। পরবর্তীকালে
হিন্দু কলেজে সিনিয়র স্কুল
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে
তিনি ১৮৫৯ সালে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সড়বাতক ডিগ্রি
লাভ করে
কর্মজীবন
কর্মজীবনেরতিনি সরকারি চাকরি, স্কুল
শিক্ষকতা এবং পরিশেষে আইন
ব্যবসায় নিয়োজিত হন। মাইকেল
মধুসূদন দত্তের পরেকাব্য রচনায়
তিনিই ছিলেন সবচেয়ে খ্যাতিমান। স্বদেশপ্রেমের
অনুপ্রেরণায় তিনি ‘বৃত্রসংহার’ নামক মহাকাব্য রচনাকরেন।হেমচন্দ্র
রচিত সবচেয়ে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ
দুই খণ্ডে রচিত ‘বৃত্রসংহার
কাব্য’। পৌরাণিক
কাহিনির মাধ্যমে এই কাব্যে তিনি
অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছেন।
তাঁর রচনায় দেশপ্রেমের
পাশাপাশি সমাজের কুসংস্কার ও
প্রথাবদ্ধতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ ধ্বনিত
হয়েছে। সামাজ
ও দেশের অচলায়তন ভাঙার
স্বপ্ন দেখা কবি নারীমুক্তির
পক্ষে ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। তাঁর
কবিতায় সেই সুর ধ্বনিত
হয়েছে। এমনকি
হিন্দু সমাজে বিধবা নারীর
প্রতি নির্দয় নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধেও
কবিতা ছিল তাঁর হাতিয়ার।
তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে:
‘ভারতবিলাপ’, ‘কালচক্র’, ‘বীরবাহুকাব্য’, ‘রিপন উৎসব’, ‘ভারতের
নিদ্রাভঙ্গ’, ‘গঙ্গা’, ‘জন্মভূমি’, ‘দশমহাবিদ্যা’, ‘চিন্তাতরঙ্গিণী’, ‘আশাকানন’, দান্তের ‘দি ডিভাইন কমেডি’র অনুসরণে রচিত
‘ছায়াময়ী’ ইত্যাদি। ১৮৭২
সালে ‘এডুকেশন গেজেট’ পত্রিকায়
হেমচন্দ্রের ‘ভারত সঙ্গীত’ কবিতাটি ছাপা হলে কবি
এবং সম্পাদক দুজনই সরকারের রোষানলে
পড়েন।এই
কবিতায় সরাসরিভাবে সকল পরাধীনতা, সব
ধরনের অচলায়তন ও অবক্ষয়ী মূল্যবোধের
নিগড় থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত
হবার আহ্বান জানিয়েছেন কবি। স্বদেশ
চিন্তা ও সমাজ ভাবনা
আশ্রিত তাঁর সকল রচনাই
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান করে
নিয়েছে।
২৪শে মে ১৯০৩ সালে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।]