শিশু অধিকার ও জাতি সংঘ শিশু অধিকার সনদ

                   শিশু অধিকার ও জাতি সংঘ শিশু অধিকার সনদ:

                                                     শিশু অধিকার

 

শিশু অধিকার 


 শিশু কাকে বলে ?

) শিশু অধিকার সনদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু।

) বর্তমান পরিসংখ্যান অনুসারে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৮ ভাগই এই দলে রয়েছে।

) এই সংজ্ঞা অনুযায়ী শিশু সম্পর্কিত সকল আইন, নীতি চর্চা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

 

জাতি সংঘ শিশু অধিকার সনদ:

 শিশুদের মানবাধিকার এবং সকল শিশুর জন্য সেসব অধিকার অর্জন  করতে হলে সব দেশের সরকারকে যে নিরিখগুলো অবশ্যই গ্রহন করতে হবে সেগুলো খুব সংক্ষেপে অথচ সম্পূর্ণভাবে বিবৃত হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে এটি হচ্ছে শিশু অধিকার সনদ। সনদ ইতিহাসের সবচেয়ে সর্বজনীন মানবাধিকার দলিল। তাই দলিল মানবাধিকারের সর্বজনীণ প্রয়োগ অন্বেষায় অনন্যভাবে শিশুদেরকে মধ্যমণি করে তুলেছে। দলিলটি অনুমোদনের মাধ্যমে জাতীয় সরকারগুলেঅ শিশুদের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে এবং অঙ্গীকার বাসত্দাবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়ের কাছে নিজেদের দায়বদ্ধ করে তুলছে।

বিচিত্রপূর্ণ আইন ব্যবস্থা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোকে তৈরি শিশু অধিকার সনদটি সর্বজনীনভাবে গৃহীত কিছু অবিনিমেয় নিরিখ দায়দায়িত্বের সমাহার। এতে বর্নিত রয়েছে শিশুরা সর্বত্র বৈষম্যহীভাবে ভোগ করতে পারে এমন কিছু মৌলিক মানবাধিকার: বেঁচে মাত্রায় বিকাশের অধিকার: কুপ্রভাব, নির্যাতন শোষণ থেকে নিরাপদ থাকার অধিকার এবং পারিবারিক, সাংস্কৃতিক সামাজিক জীবনে পুরোপুরি অংশগ্রহণের অধিকার। সনদের বর্ণিত প্রতিটি অধিকার প্রত্যেক শিশুর মানবিক মর্যাদা সুষম বিকাশের জন্য অপরিহার্য। স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষা আইনগত, নাগরিক সামাজিক সেবা প্রদানের মান নির্ধারণের মাধ্যমে সনদ শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। মানগুলোর নিরিখে এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিমাপ করা যাবে। সে সব রাষ্ট্র এই সনদের শরিক তারা শিশুদের সবোচ্চ স্বার্থের আলোকে যাবতীয় নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে দায়বদ্ধ।

শিশু অধিকার সনদ আইনগত ভাবে বাধ্যবাধকতাপূর্ণ প্রথম আন্তর্জাতিক দলিল যাতে সব ধরণের মানবাধিকার নাগরিক রাজনৈতিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে। সনদের বিধানগুলোকে জোরালো করতে সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের জড়িত করা শিশু বিক্রয়, শিশুদের পতিতাবৃত্তি তাদের নিয়ে অশ্লীল চলচ্চিত্র সম্পর্কে দুটি ঐচ্ছিক প্রটোকল গৃহীত হয়। প্রটোকলগুলো যথাক্রমে ২০০২ সালের ১২ ফেব্রম্নয়ারী ১৮ জানুয়ারী তারিখে বলবৎ হয়।

শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন বাসত্দাবায়নের বাংলাদেশের ভূমিকা:

 ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ জাতি সংঘ শিশু অধিকার সনদ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন গ্রহণ করে। সাধারণ পরিষদের সভায় উপস্থিত ১৭৮ জন রাষ্ট্র সরকার প্রধান সনদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ১৯৯০ সালের ২৬ জানুয়ারী সনদের মূল দলিলটি সদস্য রাষ্ট্র সমূহের স্বাক্ষর, অনুসমর্থন জাতিসংঘ নীতিমালার অন্তর্ভূক্তির জন্য উম্মুক্ত করা হয়। প্রথম দিনেই যেসব রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর দান করে বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। মূলতঃ শিশু অধিকার সনদের খসড়া প্রণয়ন থেকে বাসত্দাবায়নের সকল পর্যায়েই বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯০ সালের আগষ্ট বাংলাদেশ এই সনদে অনুসমর্থন দান করে, অর্থ্যাৎ সনদের বাস্তবায়নে রাষ্টের অঙ্গীকার গ্রহণ করে।

 

সনদের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর নূন্যতম সদস্য রাষ্ট্রের অনুসমর্থনের মাধ্যমে এই সনদ জাতিসংঘের একটি কার্যকর দলিলে পরিণত হয় এবং স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহের উপরে একটি আইনি বাধ্যবাধকতার মর্যাদা লাভ করে।

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। শিশু দারিদ্র মোচনের লৰ্যে নানাবিধ অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শিশুকে অপরাধি সাব্যস্ত করার নূন্যত্তম বয়সের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিসহ নিরাপদ মাতৃত্ব, জরুরী ভিটামিনসমূহ সরবরাহ করা এবং জাতীয় স্থানীয় পর্যায়ে শিশু মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রচারাভিযানের মাধ্যমে শিশুর জীবন রক্ষা, সুস্বাস্থ্যর নিশ্চয়তা দানকারী সেবা কর্মসূচিসমূহ বিস্তার লাভ করে চলেছে। শিশুর বেঁচে থাকা এবং তার শারীরিক, মানসিক বিকাশ উন্নয়নের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করার সার্বিক প্রচেষ্টা সমাজের সর্বত্রই চলছে। শিশুদের অধিকারগুলো রাষ্ট্রিয়, স্থানীয় পারিবারিক কর্মপরিকল্পনায় ক্রমশ: অধিকতর গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে এসব অধিকার দ্রুত সঠিক ভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গণসচেতনতা, শিশু অধিকার বিষয়ে সমাজনেতা, যুবজন, ছাত্র সমাজ, এনজিও সমূহ, নারী সংগঠন, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শিশু সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সবোপরি শিশুদের নিজেদের মধ্যে শিশু অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহ, সচেতনতা চাহিদা সৃষ্টি করতে পারা।

 শিশু অধিকার সনদ

১৯২ টি দেশ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে (২০০৫);

কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোমলিয়া এই দুটি দেশ কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি। তবে তারা আভাস দিয়েছে যে আনুষ্ঠানিক সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যম তা অনুমোদন করবে।

শিশু অধিকার সনদের অধিকারগুলো: 

) বেঁচে থাকার অধিকার

মধ্যে রয়েছে জীবন ধারণে সহায়ক মৌলিক বিষয়াদির অধিকার, যেমন স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ।

) বিকাশের অধিকার

এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার অধিকার, শিশুর গড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত একটি জীবন যাত্রার মান ভোগের অধিকার এবং অবকাশ যাপন, বিনোদন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ।

) সুরক্ষার অধিকার

এই শ্রেণীতে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে শিশুদের অধিকারসমূহ যেমন, শরণার্থী শিশু, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশু, শোষণ, নির্যাতন অবহেলার শিকার হবার সম্ভাবনা রয়েছে এমন শিশু।

) অংশগ্রহণের অধিকার

এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার, অন্যদের সাথে অবাধে নিরাপদ সম্পর্ক গড়ে তোলার অধিকার এবং তথ্য চাওয়া, পওয়া এবং প্রকাশের অধিকার।

 

সনদের চারটি মূলনীতি:

) বৈষম্যহীণতা

সকল শিশুর, লিঙ্গ, অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্ম, ভাষা, জাতীয়তা, গোত্র, বর্ণ, শারীরিক সামর্থ অথবা জন্মের ভিত্তিতে কোনরকম বৈষম্য ছাড়াই সনদে বর্ণিত অধিকারসমূহ ভোগের অধিকার রয়েছে।

) শিশুর সর্বোত্তর স্বার্থ

মা-বাবা, সংসদ, আদালত এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করবেন।

) শিশুর অধিকার সমুন্নত রাখা পিতা-মাতার দায়িত্ব

সনদে বর্ণিত অধিকারসমূহ প্রয়োগের ক্ষেত্রে মা-বাবার একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।

) শিশুর মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন

নিজের মতামত গঠনের উপযোগী বয়সের শিশুর নিজস্ব বিষয়ে অবাধে মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।

একদিন আসবে যখন আসবে যখন সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি দেখে একটি দেশকে বিচার করা হবে না, বরং অসহায় এবং দূরূহ অবস্থায় পতিত শিশুদের মানসিক দৈহিক বিকাশের জন্য যে সকল ব্যবস্থাদি নিশ্চিত করা হয়েছে, সেই নিরিখেই দেশটির বিচার করা হবে ।

Post a Comment

0 Comments