Asian Highway (এশিয়ান হাইওয়ে)

Asian Highway (এশিয়ান হাইওয়ে) 

এশিয়ান হাইওয়ের ধারনা নতুন নয়। আফগান শাসক শেরশাহ সুর ১৫৪০ সালে স্থলবেষ্টিত কাবুলকে বহির্বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করার জন্য এশিয়ান হাইওয়ের পরিকল্পনা করেন।থান্ডট্রাংক রােড নামে এ সড়কটি ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। 

এশিয়ান হাইওয়ে হচ্ছে এমন একটি প্রস্তাবিত যােগাযােগ ব্যবস্থা যা এশিয়ার দেশগুলােকে স্থলপথের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ইউরােপের সাথেও সংযুক্ত করবে। এসকাপ (Economic and Social Commission for Asia and the Pacific, ESCAP) ১৯৫৬ সালে এশিয়ার রাষ্ট্রগুলাের মধ্যে যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প নতুন করে গ্রহন করে। আশির দশক থেকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলাের অর্থনৈতিক প্রয়ােজন, বাণিজ্য সম্প্রসারন ও পর্যটন বিকাশের জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলাের মধ্যে সড়কপথে যােগাযােগের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৯৯২ সালে এসকাপ এ গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি এশিয়ান স্থলপথ অবকাঠামাে উন্নয়ন প্রকল্প (Asian Land Transport Infrastructure Development, ALTID) গ্রহণ করে। উক্ত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে।

 (ক=এশিয়ান হাইওয়ে বা এশিয়ান সড়ক যােগাযােগ ব্যবস্থা

 (খ) ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ

 (গ) সীমান্ত পারাপারে সুবিধা ও যানবাহন চলাচলের সুবিধা।

উপযুক্ত বিষয়গুলাে অবশ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনের আওতায় চুক্তি সম্পাদনের দ্বারা নির্দিষ্ট ও নির্ধা করতে হবে। এশিয়ান হাইওয়ের আওতাভূক্ত রাষ্ট্রের সংখ্যা ২৫। সরাসরি দেশগুলাের (২৫) রাজধানীর সা সড়ক যােগাযােগ স্থাপন করা এশিয়ান কার্যক্রমের উদ্দেশ্য। 

প্রস্তাবিত হাইওয়ের দৈর্ঘ্য ৪০ হাজার কিলােমিটার। হাইওয়ের প্রধান রুট হচ্ছে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ এশিয়া, আফগানিস্তান, ইরান ও ইউরােপ । বাংলাদেশের কোন্  কোন অঞ্চলের মধ্যদিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে প্রবাহিত হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে এক্ষেত্রে সম্ভাব্য । পথগুলাে হচ্ছে। 

(ক) ভারত হতে রংপুর হয়ে যমুনা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা হয়ে সিলেটের তামাবিল হয়ে উত্তর

পূর্ব ভারত। (

খ) ভারত থেকে বেনাপােল - যশােহর - নড়াইল - ঢাকা - সিলেটের - তামাবিল হয়ে উত্তরপুর্ব

ভারত। (উত্তর পূর্ব ভারতের মধ্য দিয়ে মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যােগাযােগ সৃষ্টি হতে পারে)।

 (গ) দক্ষিণ-পূর্ব (চট্রগাম-কক্সবাজার-আরাকান) হয়ে মায়ানমার ।

 দেখে নিন-  

এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারলে বাংলাদেশের প্রভূত স্বার্থ বিশেষ করে অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষিত হবে বলে ধারনা করা হয়। এর মাধ্যমেঃ

 (ক) বাংলাদেশের শিল্প বিনিয়ােগ ও ব্যবসায় - বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

 (খ) এশিয়ার রাষ্ট্রগুলাের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রিক সম্পর্ক বৃদ্ধিপাবে, যার সুফল বাংলাদেশও ভােগ করবে। (গ) আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযােগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

 (ঘ)বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে ভােগ্যপণ্যের অবাধ বিনিময় ও প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।

বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে যাতে বাংলাদেশের উপর দিয়ে চলে যায় সে ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। এসকাপ পরিকল্পিত নতুন রুট হলাে যশাের-বনগাঁ-তামাবিল। এই রুট ভারত থেকে ঢুকে সিলেট দিয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করে মিজোরাম হয়ে মায়ানমার পর্যন্ত যাবার কথা।

ইতােমধ্যে মায়ানমার সরকার কক্সবাজার - টেকনাফ রুটদিয়ে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের ব্যাপারে নীতিগতভাবে রাজী হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলের মধ্যে মতবিরােধও রয়েছে। কোন কোন মহলের ধারনা এশিয়ান হাইওয়ের প্রবেশাধিকারের ভিত্তিতে ভারত বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করবে এবং ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্যের (Seven Sisters) বিদ্রোহ দমনের জন্য বাংলাদেশের ভুখন্ড দিয়ে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র চলাচলে সুযােগ করে দিবে। এছাড়া ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ভারত বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করবে।

অবশ্য উক্ত মতামত রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বলেও অনেকে মনে করেন। এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্তির সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ এতােই বেশী যে আশা করা যায় অর্থনৈতিক স্বার্থবােধ রাজনৈতিক মতপার্থক্যের উপরে অবস্থান (prevail) করবে।

 


Post a Comment

0 Comments