‘ব্লু ইকোনমি’ এবং বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা।

‘ব্লু ইকোনমি’  এবং বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা

ব্লু -ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সাগরের জলরাশি ও এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। পৃথিবীর দেশগুলো তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে তাকিয়ে আছে সমুদ্রবক্ষে সঞ্চিত সম্পদের দিকে।সমুদ্রে অবস্থিত বিশাল জলরাশি এবং এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে ব্লু-ইকোনমির মাধ্যমে। ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক গুন্টার পাউলি ভবিষ্যতের অর্থনীতির রূপরেখা প্রণয়নের জন্য একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে ব্লু-ইকোনমির ধারণা দেন।

বর্তমান বিশ্বে বস্নু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতি বা সমুদ্র অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় বিকল্প অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বস্নু ইকোনমির আধুনিক সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সমুদ্রে যে পানি আছে এবং এর তলদেশে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, সেসব সম্পদ যদি আমরা টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করি তবে তাকে বস্নু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতি বলে। মোট কথা বস্নু ইকোনমি বলতে সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতিকে বোঝায়। বস্নু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি দেশ। ২০১২ সালের রিওডি জেনিরোতে টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক জাতিসংঘ সম্মেলনে প্রথম উত্থাপিত হয় 'বস্নু-ইকোনমি'। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল জীবন মানের উন্নয়ন এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। 

‘ব্লু ইকোনমি’  এবং বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা

২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯০০ কোটি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান দিতে বাধ্য হয়েই তখন সমুদ্রের মুখাপেক্ষী হতে হবে সবাইকে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সমুদ্র নানাভাবেই অবদান রেখে চলেছে। বিভিন্ন তথ্যমতে, বিশ্বের ৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্ত। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে।

 দেখে নিন-  

সমগ্র বিশ্বে ক্রমেই ক্ল-ইকোনমি জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশাল সমুদ্রজয়ের পর সমুদ্র অর্থনীতি ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ সমুদনির্ভর। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যে, তা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা গেলে সমুদ্র থেকে আহরিত সম্পদের মূল্যমান জাতীয় বাজেটের দশগুণ হবে। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়া সমুদ্রসম্পদ থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে ব্ল-ইকোনমির বদৌলতে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মূল্যবান সম্পদ আহরণে কতটা সক্ষম আমরা?

বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়ে মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ চলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মায়ানমারের সাথে ও ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। যার ফলে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমপরিমাণ টেরিটোরিয়াল সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, অধিকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার আয়তন প্রায় আরেকটি বাংলাদেশের সমান। আরো আছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল। আর চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের সম্পদের ওপর রয়েছে পুরো অধিকার।
দেশের স্থলভাগে যে পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান, তার প্রায় সমপরিমাণ (৮১ শতাংশ) সম্পদ সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে।বঙ্গোপসাগরের তলদেশে যে খনিজ সম্পদ রয়েছে তা পৃথিবীর আর কোনো সাগর, উপসাগরে নেই বলেও ধারণা করা হয়। খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৭ ধরনের খনিজ বালি। এর মধ্যে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় জিরকন, রুটাইল, সিলিমানাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, কায়ানাইট, মোনাজাইট, লিকোক্সিন ইত্যাদি। যার প্রত্যেকটি পদার্থই মূল্যবান, তবে মোনাজাইট অতিমূল্যবান পদার্থ। এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ও পারমাণবিক চুলি্লতে শক্তি উৎপাদক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছসহ ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৩৩৬ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক রয়েছে। এছাড়া রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সম্পদ। সমুদ্র জয়ের ফলে বঙ্গোপসাগরে ভারতের হাতে থাকা ১০টি গ্যাস বস্নকের মধ্যে আটটি এবং মায়ানমারের অধীনে থাকা ১৩টির মালিকানা বাংলাদেশ পেয়েছে। এসব বস্নক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় রয়েছে ৪টি মৎস্যক্ষেত্র। মৎস্য সম্পদ ছাড়াও সামুদ্রিক প্রাণী, সামুদ্রিক আগাছা, লতা, গুল্মতেও ভরপুর বঙ্গোপসাগর।

বঙ্গোপসাগরে আছে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক আগাছা। এসব আগাছা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করা যায়। এসব আগাছার মধ্যে ইসপিরুলিনা সবচেয়ে মূল্যবান। চীন, জাপান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ এগুলোকে খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে। তেল-গ্যাস ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ১৩টি জায়গায় সোনার চেয়ে অধিক মূল্যবান বালু অর্থাৎ ইউরেনিয়াম- থোরিয়াম রয়েছে যাতে মিশে আছে ইলমেনাইট, গানেট, সেলিমেনাইট, জিরকন, রুনটাইল ও ম্যাগনেটাইট। গবেষণা সূত্রগুলো বলছে, ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯০০ কোটি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাবার জোগান দিতে তখন সমুদ্রের মুখাপেক্ষী হতে হবে। তাই আমাদের আগে থেকেই সতর্কজনক অবস্থানে থাকতে হবে। আমাদের বস্নু ইকোনমি নীতিমালাতে জোর দিতে হবে। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর গৃহীত পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। একাজে বিদেশিদের সাহায্য ও পরামর্শ নেবার সাথে সাথে দেশের বাইরে যেসব বাংলাদেশি এই খাতে গবেষণায় ও কাজে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রে শুধু মাছই রয়েছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির। এছাড়াও শামুক, ঝিনুক, শ্যালফিস, কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙ্গরসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী, যেগুলো বিভিন্ন দেশে অর্থকরী প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রাণিসম্পদ ছাড়াও ১৩টি জায়গায় আছে মূল্যবান বালু, ইউরেনিয়াম ও খোরিয়াম। এগুলোতে মিশে আছে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমেনাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইট। এসব সম্পদ অতি মূল্যবান। তাছাড়া সিসেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে সমুদ্র তলদেশে। ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে বিশ্বে স্বলভাগের সম্পদের পরিমাণ কমে গেছে। তাই নতুন সম্পদের খোঁজে রয়েছে সারা বিশ্ব। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান “সেভ আওয়ার সি”র তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্র থেকে মাছ ধরে শুধু রফতানি করেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। গভীর সমুদ্র থেকে আহরিত টুনা মাছ সারা বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এই মাছটি দেশের আন্তর্জাতিক মানের হোটেলগুলোতে আমদানি করা হয়ে থাকে। এই মাছ সঠিকভাবে আহরণ করতে পারলে নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি করাও সম্ভব। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ থেকে খাবার, মাছের তেল দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ, সস, চিটোসান ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব, যার ফলে নতুন ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তা বিদেশে রফতানি করেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে। এসডিজি'র ১৪ নম্বর ধারায় টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদের অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। আর তাই ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি পূরণের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়েছে। সমঝোতা চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন।আগ্রহ রয়েছে জাপানেরও। এছাড়া হাতে নেয়া হয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। এর বাইরে সমুদ্র উপকূলীয়এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে আশা করা যাচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সম্ভাবনার দুয়ারখুলে দেবে ক্র ওশান ইকোনমি বা নীল সমুদ্র অর্থনীতি। 

বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে সমুদ্র নির্ভর ব্লু- ইকোনোমির বদৌলতে। সম্প্রতি সমুদ্র বিজয়ের পর খুলে গেছে নীল বিপ্লবের অপার দুয়ার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাসসকে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও ভিশন-২০৪১ অর্জনে ব্লু-ইকনমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদের অবদান মাত্র ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অথবা ৬ শতাংশ।



বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি সম্ভাবনা নিম্নে বর্ণিত হলোঃ

ব্লু ইকোনমি’ সময়ের আলোচিত বিষয়। ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সমুদ্রে পাওয়াব ১,১৮,৮১৩ বর্গ কি. মি. এর যথাযথ ব্যবহারে সামুদ্রিক অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে ট্রামকার্ড।

(১) কিছুদিন আগে গৃহীত হয়েছে বাংলাদেশ ব- দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০। এ
মহাপরিকল্পনায় সমুদ্র অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় নীল অর্থনীতির
সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ৫ ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলো সামুদ্রিক সম্পদের বহুমাত্রিক জরিপ দ্রুত সম্পন্ন করা। এর মাধ্যমে সরকার সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর জন্য প্রথম এবং প্রধান কাজটিই হাতে নিয়েছে।
(২) সমুদ্র বিজয়ের ফলে বাংলাদেশ যে অঞ্চলের মালিকানা পেয়েছে, সেখানে অন্তত চারটি ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালানো হলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার উপার্জন করা সম্ভব। ক্ষেত্র চারটি হলো তেল-গ্যাস উত্তোলন, মৎস্য সম্পদ
আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটন।
(৩) সুস্থির সামুদ্রিক কার্যক্রমের নিমিত্তে বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক ব্লু প্রোগ্রামের ( PROBLUE)
জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করা হয়েছে। যার সাইনিং সম্পাদিত হয়েছে নভেম্বর
২০১৮ তে। বাংলাদেশে সামুদ্রিক খাতেও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে।
(৪) বঙ্গোপসাগর তীরে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও থাই উপকূলে ১৪৫ কোটি মানুষের বাস।
বাংলাদেশের অবস্থান কেন্দ্রে। ফলে এখানকার বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সুফল বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার ভালো সুযোগ রয়েছে।
(৫) বর্তমানে বাংলাদেশের ট্রলারগুলো উপকূল থেকে ৩৫-৪০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে মাছ
আহরণ করে। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০০ নটিক্যাল মাইল। আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে সমুদ্র অর্থনীতিতে দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে।
(৬) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ( FAO) মতে, ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন। নতুন জলসীমার অধিকার পাওয়ায় ব্লু ইকোনমি প্রসারে বাংলাদেশের এ সম্ভাবনা সৃষ্টি
হয়েছে। তাই সমুদ্র খাতের এ সুযোগ লুপে নেয়াই এখন কাজ।
(৭) ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১টি সদস্য দেশের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান ওসেন রিম
অ্যাসোসিয়েশন-IORA’ এর সদস্য বাংলাদেশ। ব্লু ইকোনমি নিয়ে এ জোটের বিভিন্ন দেশ কাজ
করছে।
(৮) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (DCCI) হিসাব মতে, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের
৭০ শতাংশ আসে সমুদ্রে মাছ আহরণ, সামুদ্রিক খাদ্য ও বাণিজ্যিক সমুদ্র পরিবহন হতে। প্রায় ৩
কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল সামুদ্রিক মাছ আহরণে নিয়োজিত আছে ৫০ লাখ মানুষ। এ খাতে আধুনিকায়ন হলে এ সংখ্যা বাড়া কেবল সময়ের ব্যাপার। 
(সূত্রঃজনকণ্ঠ, ২৭ জুলাই ২০১৭)
(৯) সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ‘ক্লে’র সন্ধান পাওয়া গেছে বঙ্গোপসাগরের প্রায় ৩০
থেকে ৮০ মিটার গভীরে । অগভীর সমুদ্রের ক্লে উত্তোলন করা যায় গেলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এছাড়াও সমুদ্র তলদেশে মহামূল্যবান ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিশ্বে এ ধাতু দুটির চাহিদা কিরূপ তা সহজে
অনুমেয়।
(১০) সমুদ্র নির্ভর অর্থনীতি থেকে যদি ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায়, তাহলে ভিশন ২০৪১ পূর্ণ
করা সহজ হবে। ফলে আমরা এই সময়ের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাব।

 নীল অর্থনীতির সুদূরপ্রসারী অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে কিছু পদক্ষেপ নিতেই হবে। নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত ও সঠিক পরিসংখ্যান করা যাতে বিনিয়োগকারীদের এই খাতে আকৃষ্ট করা যায় এবং এই খাতের উন্নয়ন করা যায়। প্রযুক্তিনির্ভরতা ও দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ, বস্নু ইকোনমি সম্পর্কে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। মাছ ও যেসব অনাবিষ্কৃত সমুদ্র সম্পদ আছে সেগুলোর বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান, পরিবেশবান্ধব সংগ্রহ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা। সমুদ্রভিত্তিক মাছ চাষ, সী-উইড চাষ, ঝিনুক চাষের পদ্ধতি অবলম্বন করতে উৎসাহিত করা।

বঙ্গোপসাগরের জৈব ও অজৈব সম্পদ রফতানি চুক্তি করা। প্রতিবেশী দেশ যেমনঃ নেপাল আর ভুটানকে পোর্ট সুবিধা দেয়া। বস্নু-ইকোনমিতে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা ও পরামর্শ গ্রহণ যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সমুদ্র বিষয়ে মহাপরিকল্পনা, জাতীয় নিরাপত্তা ও সম্পদ উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের জন্য উদোগ নেয়া। মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের জন্য কর্মপন্থা প্রণয়ন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও বন্দর সুবিধা বৃদ্ধি এবং পর্যটন ব্যবসা সমপ্রসারণ করা। আন্তর্জাতিক সীমা লঙ্ঘন আইন, ্তুএফ এ ও কোড অফ কন্ডাক্ট ফর রেস্পন্সিবল ফিশারিজ (সি,সি,আর,এফ) এর ধারাসমূহের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন করা।
সামগ্রিক বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যারিটাইম রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিমরাড), বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ভূমিকা রাখা। সমুদ্রনির্ভর শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকরী সকল ধরনের পদক্ষেপ ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। মেরিন সায়েন্সের বিকাশে ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments