বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বাংলা উপন্যাসের স্থপতি ও সার্থক উপন্যাসের জনক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৩৮ সালের ২৬ জুন (২৯ আষাঢ় ১২৪৫)পশ্চিম বঙ্গের চব্বিশ পরগণার কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ডেপুটি কালেকটর যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং মা দুর্গা সুন্দরী।
১৮৪০ সালে পিতার কর্মস্থল মেদেনীপুরে গমন এবং সেখানকার ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৪৯ সালে মেদেনীপুর থেকে কাঁঠালপাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং একই বছর তাঁর এগার বছর বয়সে পাঁচ বছর বয়সী মোহিনীদেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারপর হুগলি কলেজের স্কুল বিভাগে ১৮৪৯সালে ভর্তি হন। কলেজের জুনিয়র ও সিনিয়র বিভাগে বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৫৬ সালে আইন পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষা প্রবর্তিত হলে তাতে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এর পরের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সারা ভারতবর্ষের প্রথম গ্রাজুয়েট হিসাবে বিএ পাস করেন। কর্মজীবনে তিনি একজন সরকারি আমলা ছিলেন। তিনি সাহিত্যের রসবোদ্ধাদের কাছ থেকে 'সাহিত্য সম্রাট' ও হিন্দু ধর্মানুরাগীদের কাছ থেকে 'ঋষি' এবং বাংলা সাহিত্যাকাশে 'স্কট' উপাধিতে আখ্যা লাভ করেন। বঙ্কিমচন্দ্র প্রখ্যাত উপন্যাসিক স্যার ওয়াল্টার স্কটের রোমান্স আশ্রয়ী ঐতিহাসিক উপন্যাসের আদর্শের অনুসারী ছিলেন। তাঁর উপন্যাসে বাস্তবজীবনকে ভিত্তি হিসাবে গ্রহণসহ বিস্ময়কর ও অলৌকিকের প্রতি প্রবণতা প্রকাশমান। ঐতিহাসিক উপন্যাসে তিনি যেমন ইতিহাস ও দৈবশক্তির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন তেমনি অন্যান্য সামাজিক ও দেশাত্ববোধক উপন্যাসেও অলৌকিকতা ও কাল্পনিকতার আশ্রয় নিয়েছেন। ড. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে- "বঙ্কিমের হাতে বাংলা উপন্যাস পূর্ণ যৌবনের শক্তি ও সৌন্দর্য লাভ করেছে।" মানব হূদয়ের দ্বিধাদ্বন্দ্বের বিশ্লেষণও বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের অনন্য বৈশিষ্ট্য। তিনি কলকাতায় কহুমূত্ররোগে ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ (২৬ চৈত্র.১৩০০) সালে মৃত্যু বরণ করেন।
0 Comments