টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) বাংলাদেশের অর্জন" (আপডেট-২০২১)

 
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) বাংলাদেশের অর্জন" (আপডেট-২০২১)

Transforming our world: the 2030 Agenda for Sustainable Development" - শিরোনামে ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৭ টি গোল, ১৬৯ টি টার্গেট এবং ২৩২ টি ইন্ডিকেটরসের সমন্বয়ে গৃহীত হয় "টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি)। বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিক উদযাপন করছে তখন এই এসডিজি তার পাঁচ বছরের যাত্রাপথ অতিক্রম করেছে। ২০৩০ সালের সময়সীমার মধ্যে আমরা আমাদের এই ধরনীকে কেমন দেখতে চাই - তারই এক চিত্র ফুটে উঠেছে এই এসডিজির ১৭ টি গোলে। বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এই লক্ষ্যমাত্রার কতটুকু ছুঁতে পেরেছে, বাকি ১০ বছরেই বা (২০৩০ পর্যন্ত) সরকারের কী কী পরিকল্পনা রয়েছে তারই সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি এই লেখায়। এই আলোচনার সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট বছরগুলোর বিভিন্ন সমীক্ষা, বাজেট-২০২১-২২, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২০ এবং ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা (প্রকাশিত-২০২১) অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। চলুন জেনে নেই এসডিজির গতিপথে বাংলাদেশ কতদূর।
Sustainable Development Goals-01 এর মূল বিষয়: "End poverty in all its form everywhere"। এর অধীনে ৭ টি টার্গেট রয়েছে। প্রতিটি টার্গেট-ই ২০৩০ এর মধ্যে পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
Target 01 এর মূল বিষয় "চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ ($ 1.90 per day বিবেচনায়)": বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্যের হার ২০০৫ এ ছিল- ২৫.১%, গত অর্থবছরের ছিল ১৫.২%, আর ২০২০ অর্থবছরে ছিল ১০.৫%। অর্থাৎ গত একযুগে সরকার প্রায় ১৪% হারে চরম দারিদ্র্য দূর করেছে। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ এর মধ্যে এই হার ৭.৪% কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
Target 02: এর মূল বিষয় "দরিদ্র নারী, পুরুষ ও শিশু সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা": সার্বিকভাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২০০৫ এ ছিল- ৪০%, বিগত অর্থবছরের ছিল ২৪.৩%, আর চলতি অর্থবছরের ২০.৫% । অর্থাৎ গত একযুগে সরকার জাতীয় দারিদ্র্য ৪.২৩% হারে হ্রাস করতে পেরেছে। এছাড়াও ৮ম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ এর মধ্যে এই হার ১৫.৬% এবং ২০৩০ এর মধ্যে ৯.৭% কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
Target 03 এর মূল বিষয় "দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করা": সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিরও একটি অংশ বটে। চলতি বাজেটে এ খাতে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। মোট ৭৩ টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার, যার মধ্যে ৬৩ টি চালু আছে। আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯০ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। মুজিব বর্ষের শুরুতে মাত্র এক দিনে (২৩ জানুয়ারি, ২০২১) ৬৬,১৮৯ টি পাকা বাড়ী ও ২ ডেসিম্যাল জমি প্রদান করা হয় যা ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য মাত্রার (৬৫৭২৬) চেয়েও বেশি ছিল।
Target 04 এর মূল বিষয় "দরিদ্র নারী পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা": বয়স্ক ভাতা (৫০০/-), ল্যাকটেটিং মাদার্স ভাতা (৫০০/-), বিধবা ভাতা (৫০০/-) সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তাছাড়া সংবিধানের ১৯(৩), ২৮(২) তো আছেই।
Target 05 এর মূল বিষয় "সকল শ্রেণীর দরিদ্র মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষম করে তোলা": বাংলাদেশ সরকার মূলত SDG Goal 13 এর সাথে সমন্বয় করে এক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের রয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য (যা আমরা Goal 13 এ বিস্তারিত আলোচনা করব)। LDC ভুক্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম যে নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত এই ট্রাস্টে ৩৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।
Target 06 এর মূল বিষয় "দেশীয় বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত সম্পদের গতিশীলতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ": এক্ষেত্রে বাংলাদেশের 'সুনীল অর্থনীতি' (Blue Economy) উন্নয়নের অবাধ সুযোগ, 'ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের' সুবিধা কাজে লাগানো, প্রধানমন্ত্রীর 'আমার গ্রাম আমার শহর', 'আমার বাড়ি আমার খামার' প্রকল্প সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশীয় সম্পদের গতিশীলতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
Target 07 এর মূল বিষয় "দারিদ্র্য দূরীকরণে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে শক্তিশালী নীতিমালা তৈরি করা": সরকারের বর্তমান বৃহৎ প্রকল্প, বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০, দ্বিতীয় বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১, ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০- জুন ২০২৫) BS-1, 100 Special Economic Zones, সহ বিভিন্ন পরিকল্পনায় ইতোমধ্যেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এছাড়াও দারিদ্র্য বিমোচন ও সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত নিচের দশটি বিশেষ উদ্যোগ সরকারের দক্ষ নেতৃত্বের উদাহরণ বহন করছে:
১) আমার বাড়ি আমার খামার:
- যাত্রা শুরু ১ জুলাই, ২০১৬
- বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে কাজ চলছে।
- দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী ১০ মিলিয়ন পরিবারকে প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসাই এর মূল উদ্দেশ্য।
- ইতোমধ্যেই প্রকল্প এলাকায় দারিদ্র্যের হার ১৫% থেকে কমে ৩% এ নেমে এসেছে।
- উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর জন্য ৪৯% অংশীদারিত্ব রাখা হয়েছে, বাকি ৫১% সরকারের জন্য।
২) আশ্রয়ন প্রকল্প:
- বঙ্গবন্ধুর গৃহীত "গুচ্ছগ্ৰাম প্রকল্পের" আদলে ১৯৯৭ সালে প্রথম আশ্রয়ন প্রকল্প গৃহীত হয়।
- ২০১০ থেকে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ নামে পথচলা শুরু।
(বিস্তারিত গোল১ এর টার্গেট-৩ এ দেখুন)
৩) কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচী:
- প্রথম গৃহীত হয় ১৯৯৮ সালে। (বিস্তারিত গোল-৩ এর আলোচনায় দেখুন)
৪) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: এ খাতে জিডিপির ২.২% ব্যয় করে যাচ্ছে সরকার। ২০২০ পর্যন্ত এর সুবিধাভোগীর শতকরা হার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০% ছিল। এই কর্মসূচির চলতি বাজেটেও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ১২০০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০০০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও বয়স্ক ভাতা (৫০০/-), বিধবা ভাতা (৫০০/-) প্রতিবন্ধী ভাতা (৭৫০/-) সহ বিভিন্ন ধরনের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। মূলত সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ মৌলিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাস্তবায়নে সরকার প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।
৫) ডিজিটাল বাংলাদেশ: জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা সহজে পৌঁছে দেওয়া এবং প্রত্যেক খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সাল থেকেই। প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ এর অন্যতম লক্ষ্যও ছিল ২০২১ এর মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করা। ২০২০ পর্যন্ত সারাদেশে ৬৬৮৬ টি ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যেখান থেকে ২৭০ ধরনের প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল (কক্সবাজারের সি-মি-ইউ-৪ এবং কুয়াকাটার সি-মি-ইউ ৫) থেকেই মোট ব্যান্ডউইথের ৬০% পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। বাকি ৪০% চাহিদা পূরণে রয়েছে ৭ টি আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলস। তারপরেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-ইউ ৬ (ক্যাপাসিটি- ১২ টিবিপিএস) এ যোগ দিতে ইতোমধ্যেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারেই হবে এর ল্যান্ডিং স্টেশন। আশাকরা যাচ্ছে ২০২৫ এর মধ্যেই এর কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়াও কানেক্টেড বাংলাদেশ প্রকল্পের অধীনে ৭৭২ টি প্রত্যন্ত ইউনিয়নে আইসিটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। ২৫০০০+ সরকারি ডোমেইন সহ হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার পার্ক, আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই নিচের চারটি পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় শেষ করেছে:
ক) বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।
খ) শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোর।
গ) শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং & ইনকিউবেশন সেন্টার, নাটোর।
ঘ) সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, জনতা টাওয়ার।
এসব হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ দারিদ্র্য বিমোচন করে ২০৩১ এ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ এ উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথকে অনেক বেশি সুগম করবে।
৬) শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট: শিক্ষা বৃত্তি ও লেখাপড়ার খরচ বাবদ ২০২০ পর্যন্ত এ ট্রাস্ট হতে ১৪,২৯,৭৭৬ জন শিক্ষার্থীকে মোট ৬৬১.০৬ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
৭) নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচি: (গোল-৫ এ আলোচনায় দেখুন)
৮) সবার জন্য বিদ্যুত: (গোল-৭ এর আলোচনায় দেখুন)
৯) বিশেষ বিনিয়োগ: (গোল-৯ এর আলোচনায় দেখুন)
১০) পরিবেশ সুরক্ষা: (গোল ১৩+১৪+১৫ এর আলোচনায় দেখুন)
Goal-2 এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়: End hunger, achieve food security & improved nutrition, & promote sustainable agriculture:
এর অধীনে ৮টি টার্গেট রয়েছে যেগুলো ২০৩০ এর মধ্যে পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, কিশোর কিশোরী, গর্ভধারী মা এবং বয়স্কদের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা, কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে কৃষি উৎপাদন, উন্নত বীজ ও শস্য উৎপাদন, কৃষি প্রযুক্তি ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি সংক্রান্ত বানিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর, এবং মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস।
বাংলাদেশের অর্জন: রূপকল্প ২০২১ এর লক্ষ্য ছিল ২০১৩ এর মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তা নিশ্চিত হয়েছে। ২০১১-২০১২ তে মোট খাদ্য শস্য উৎপাদন ছিলো ৩৬৮ লক্ষ্য মেট্রিক টন যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৮ তে ছিল ৪১৩.২৫ লক্ষ্য মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ এ লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪১৫.৭৪ লক্ষ্য মেট্রিক টন এবং উৎপাদন হয়েছে ৪৩২.১১ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও শস্য উৎপাদন বেশী ছিল। চলতি ২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৯৫০০ কোটি টাকা। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন যথাক্রমে ৩য় ও ৫ম (FAO)। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সহ পুষ্টিকর অনেক খাদ্যে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো শিং, কই, বোয়াল মাছও রপ্তানি হয়েছে এবং একই সাথে বিশ্বে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ ছিল ২য় স্থানে। মোট মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৩২ লক্ষ মেট্রিক টন ('১১-’১২) থেকে বেড়ে গত বছর ৪২.৭৭ লক্ষ মেট্রিক টন হয়েছে। এ বছর ৪৩.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা ২০২০ এ হবে ৪৫ লক্ষ মেট্রিক টন এবং ২০২৫ এ হবে ৫০ লক্ষ্য মেট্রিক টন। মোট রপ্তানি আয়ের ১.৩৯% ই আসে মৎস্য খাত থেকে। জিডিপিতেও মৎস্য খাতের অবদান ৩.৫৭% (২০২০)। এছাড়াও দুধ উৎপাদন ৬.৯৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন (২০১৪-১৫) থেকে বেড়ে ৯.৯২ মিলিয়ন মেট্রিক টনে (২০২০) উন্নীত হয়েছে। ডিম উৎপাদন একই সময়ে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং মাংস উৎপাদন একই সময়ে ৫.৮৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭.৫১ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। GDP তে প্রাণী খাতের অবদান এ বছর প্রায় দুই শতাংশ। ২০১৭-২০২২ মেয়াদে National Nutrition Services (NNS) (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন) Operational Plan বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২৫২ টি মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২০৩০ এর মধ্যে অপুষ্টির হার ১০% নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও গোল-৩ এর সাথে সমন্বয় করে আরও কিছু পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
Goal-3 এর মূল প্রতিপাদ্য Ensure health lives & promote well being for all ages:
এর অধীনে ১৩ টি টার্গেট রয়েছে। এর মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস (৭০/১০০০০০), শিশু (সদ্যজাত-১২/১০০০ ও ৫ বছরের কম-২৫/১০০০) মৃত্যুর হার হ্রাস, এইডস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস সহ রোগ প্রতিরোধ, আ্যলকোহলের ব্যবহার প্রতিরোধ, reproductive & sexual health care নিশ্চিত, স্বাস্থ্য সমস্যায় আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস, রাসায়নিক ও পরিবেশ দূষণ জনিত মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস, মেডিসিনের গবেষণা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন ও নিয়োগ এবং global health risk এর ব্যপারে পূর্ব সতর্কীকরণ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের অর্জন: ২০০৯ সালে প্রতি লাখে মাতৃ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৫৯ জন যা ২০১৯ এ কমে হয়েছে ১৬৫ জনে। এক বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ২০১৩ তে ছিল ৩১/১০০০ যা ২০১৯ তে হয়েছে ২১/১০০০।গোল-২ ও গোল-৩ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় Health, Population & Nutrition Sector Development Plan (HPNSDP) গ্রহণ করেছে। দেশব্যাপী প্রতি ৬০০০ জনের জন্য একটি করে মোট ১৩৭৭৯ টি কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে (১ম চালু হয় ১৯৯৮)। প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন ব্যক্তিকে ৩০ ধরনের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও UNICEF এর সহায়তায় মা ও শিশুর কল্যাণে Emergency Obstructive Care চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো শিশু মৃত্যুর হার ৫০% কমিয়ে আনা। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী ২০১০ এ MDG Award লাভ করেছিলেন। জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১ প্রণয়ন, ই-হেলথ সেবা চালু, সহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্জন রয়েছে সরকারের।
Goal-4: Ensure inclusive & equitable education & promote life long learning opportunities for all. এতে ১০টি টার্গেট রয়েছে। Primary & secondary education, pre-primary education, Technical & vocational & tertiary education, employment & entrepreneurship based education, education for disabled & indigenous, improved literacy rate, ensure cultural, peaceful & global citizenship, effective educational environment, & skilled teacher উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের অর্জন: সাক্ষরতার হার ২০১১ সালের ৫১.৮% থেকে বেড়ে ২০২০ হয়েছে ৭৪.৪%। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ছাত্র ছাত্রী ভর্তির দিক থেকে বাংলাদেশে এখন বিশ্বের সেরা অবস্থানে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী ভর্তির হার বেশি (৪৯.২৫:৫০.৭৫)। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন এক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। ২০১০-১৯ পর্যন্ত সরকার বিনামূল্যে ২.৯৫ বিলিয়ন বই বিতরণ করেছে। ২০১৯ এও ৩৫,২১,৯৭,৮৮২ টি বই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে (প্রাথমিকে ১০.২৫ বিলিয়ন)। ২০১৭ তে প্রথমবারের মতো ব্রেইল পদ্ধতির বই দেয়া হয়েছে। এছাড়াও চলমান প্রকল্পের মধ্যে আছে- Primary Education Development Program, School Level Improvement Plan, Upazila Education Plan, Reaching out of Children Program, Second Chance Education program, Secondary Education Sector Improvement Program, Technical & Vocational Education Teaching Action Plan, Cross Boarder Higher Education Act 2014 বাস্তবায়ন, ICT in Education Master Plan ইত্যাদি। ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে শিক্ষা খাতে এডিপি বরাদ্দ ৪০২.২ কোটি টাকা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
Goal 5: Achieve gender equality & empower all women & girls:
৯টি টার্গেট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য end all forms of discrimination, eliminate all forms of violence, trafficking, sexual exploitation, eliminate all harmful practice such as child early & forced marriage, recognize unpaid domestic work through social protection policy, ensure equal & full political, economic & social leadership participation of women, ensure universal access to sex & reproductive health rights, ensure equal rights in Economic resources, ownership, property, natural resources, enhance ICT capabilities, adopt sound policies & enforceable legislation.
বাংলাদেশের অর্জন: এই গোল অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। ২০২০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের World Gender Gap Report-এ ১৫৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৫০ তম অবস্থানে। সরকার নারী উন্নয়নে “জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫”, নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ ইত্যাদির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপকভাবে সুনাম কুড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আ্যওয়াড লাভ করেছে, যেমন: D. Kalam Memorial International Excellence Award- ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (নারী ও শিশু সহ জনকল্যাণ, আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতা এবং ভারতের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রক্ষায়)। Life Time Contribution Award- 8 March, 2019 ( for Women empowerment, from: Institute of South Asian Woman)। Global Women’s Leadership Award- 2018 (for women education and entrepreneurship, from: Global Summit of Women)। Planet 50-50 Champion Award-2016 (for gender equality & women empowerment, from: UN-WOMEN)। Peace Tree Award- 2014 (for women & child education, from: UNESCO)। Agent of change Award-2016 (from: Global Partnership Forum)।
স্থানীয় সরকারের প্রতিটি পর্যায়ে নারীর জন্য একতৃতীয়াংশ আসন রাখা, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ করা এবং মোট আসনের ২০%-ই নারীদের দখলে থাকা (সংরক্ষিত নয়), জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম একজন নারীকে মনোনয়ন করা (বেগম নাসিমা বেগম, ndc, সাবেক সিনিয়র সচিব), নির্বাচন কমিশনের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার (বেগম কবিতা খানম) নিয়োগ দেয়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ভিসি নিয়োগ দেয়া, জাতীয় সংসদে পর পর দুই মেয়াদে নারী স্পিকার নির্বাচিত হওয়া, দীর্ঘ মেয়াদি নারী সরকার প্রধানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জন করা, নারী পুরুষের সমতার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম অবস্থান, Global Gender Gap Report এ বর্তমানে বাংলাদেশের ৬ষঠ অবস্থানে থাকা, জাতীয় সংসদে ২১ জন নির্বাচিত নারী এমপি থাকা সহ বিভিন্ন দিক থেকে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বর্তমানে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এছাড়াও সরকার “শেখ হাসিনার বার্তা, নারী পুরুষের সমতা” এই শ্লোগানকে ব্রান্ডিং করে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাসে উন্নীত করা, ১২৯৫৬ টি পল্লী মাতৃস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, মাসিক ৫০০ টাকা হারে ল্যাকটেটিং মাতৃ ভাতা, ৭১ লক্ষ্য VGD উপকারভোগী নারীদেরকে মাসিক ৩০ কেজি চাল সরবরাহ, মাসিক গর্ভবতী মাতৃভাতা ৮০০ টাকা প্রদান, নারী উদ্যোক্তা ও নারীর ক্ষমতায়নে জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন ট্রেডে ৩৩.৪৩ লক্ষ্য নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া, ২০১৫-২০১৭ পর্যন্ত ২৭৬৩ টি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন বাবদ ৫৭.৫০ লক্ষ্য টাকার “স্বপ্ন প্যাকেজ” গ্রহণ, ৬০ টি one stop crisis কেন্দ্র থেকে সেবা প্রদান, ২০১৭-২০২২ মেয়াদে ৮টি বিভাগে তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকা, তথ্য আপা প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি নারীকে আইনি সেবা প্রদানের লক্ষমাত্রা, Income Generating Activity প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে ২৫০ কোটি ৫৬ লক্ষ্য ২২ হাজার টাকার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান থাকা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৩ মাস হতে ৬ মাস করণ, বাবার নামের পাশে মায়ের নাম বাধ্যতামূলক চালু করা (১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা রোকেয়া দিবসে এর ঘোষণা দেন এবং ২৭ আগস্ট ২০০০ সাল থেকে কার্যকর হয়) -সহ নারীর ক্ষমতায়নে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলমান।
এছাড়াও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১, জাতীয় শিশু নীতি ২০১১, শিশু আইন ২০১৩, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ সহ সিডোতে অনু সাক্ষর করা এবং সংবিধানের ১৯(৩), ২৮(২) অনুচ্ছেদ গুলো নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে রেখেছে।
Goal 6: clean water & sanitation:
৮টি টার্গেট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য safe & affordable drinking water, adequate & equitable sanitation & hygiene, improve water quality from all sorts of pollution, remove water scarcity, implement integrated water resource management, protect water related ecosystem, expand international cooperation, capacity building support for developing countries, strengthen local community.
বাংলাদেশের অর্জন: ২০১০ এ দেশে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবহারের হার ছিল ৫৬%, ২০১৫ তে ৬১% এবং বর্তমানে ৮১.৫% (২০২০)। বর্তমানে সুপেয় পানির গ্রহণকারীদের শতকরা হার ৯৮% যা ২০১৫ তেও ছিল ৮৭%।
Goal 7: Affordable and clean energy
৫ টি টার্গেট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য: ensure access to affordable, reliable, sustainable, renewable & modern energy, double the global rate of improvement in energy efficiency, international cooperation, expand infrastructure & upgrade technology.
বাংলাদেশের অর্জন: সুদীর্ঘ ৪০ বছর এই খাতে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে পিছিয়ে ছিল। তবে ২০০৯ সাল থেকে এক্ষেত্রে সাফল্য উল্লেখ করার মতো।
বিদ্যুৎ: গত দশ বছরে ৪৭% থেকে ৯৭% (২০২০ পর্যন্ত) মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে যা ২০২১ এর মধ্যে ১০০% করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২০ সালে স্থাপিত মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩০০০ মেগাওয়াট যার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ২৩৫৪৮ মেগাওয়াট। এটি ২০২৫, ২০৩০ ও ২০৪১ এ যথাক্রমে ৩০,০০০, ৪০,০০০ এবং ৬০,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন ৫১২ কি.ও ঘন্টা যা বিগত অর্থ বছর থেকে ৪৮ কি.ও. ঘন্টা বেশি। সিস্টেম লসের পরিমাণ ১৮-১৯ এ ১০.৯০% হয়েছে যা ০৮-০৯ এ ছিল ১৫.৭৩%। বর্তমানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৪৬৪ কিলোওয়াট যা ২০২১, ২০৩০ ও ২০৪১ এ যথাক্রমে ৭০০, ৮১৫ ও ১৪৭৫ কিলোওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সর্বমোট ১৪২০২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৩ টি (সরকারি ১৯+বেসরকারি ৩৪) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। সরকারি ভাবে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ১২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, এবং ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও দেশে ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (BPDP, BREB, DPDC, DESCO, WZOPDC, NESCO) কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীলতা (৪৬% বর্তমানে) কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করতে “নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা” ২০০৯ হতে কার্যকর করা হয় এবং “Sustainable & Renewable Energy Development Authority” গঠনের মাধ্যমে এই সমন্বিতভাবে এই নীতিমালার প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে, ভারত ভূটানের মধ্যে ত্রিদেশীয় যৌথ উদ্যোগে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ভুটান, নেপাল ও মায়ানমার থেকেও বিদ্যুৎ আমদানির চেষ্টা চলছে। বিদ্যুৎ খাতে চীনের সাথে ২০১২ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল।
গ্যাস: দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪৬% এবং বানিজ্যিক জ্বালানির ৭১% গ্যাস দ্বারা পূরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ২৭ টি গ্যাস ক্ষেত্রে ৩৯.৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে যার মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুদ ২৮.২৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। সম্প্রতি সিলেটের জকিগঞ্জে দেশের ২৮ তম গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার করা হয়েছে। ১৯৬০-২০২০ এর জুন পর্যন্ত দেশে ১৭.৭৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। শিল্প ক্ষেত্রে গ্যাসের বিপুল চাহিদার কারণে গতবছর ২৪ এপ্রিলে ১,৩৩,০০০ কিউবিক মিটার প্রথম এল এন জি কনসিগম্যানট আমদানি করা হয় (মহেশখালী LNG Terminal এর প্রতিটি স্টোরেজের ক্যাপাসিটি ১,৩৮,০০০ কিউবিক মিটার)।
এছাড়াও দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ ১৩.২৭ লক্ষ্য মেট্রিক টন। দেশের ৫ টি কয়লা ক্ষেত্র জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সার্বিক ভাবে সরকার ২০১৫ সালে “জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল” গঠন করেছে।
গোল ৮: Decent work and economic growth. ১২ টি টার্গেট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য: LDC ভুক্ত দেশের জন্য GDP growth 7% করা, achieve higher level of economic productivity, taking development oriented policy, job creation, entrepreneurship, protect labour right, increase capacity of domestic financial institutions, increase aid for trade support etc.
বাংলাদেশের অর্জন:
"Key Indicators for Asia & the Pacific", report of ADB, September, 2019: Purchasimg Power Parity বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৯ টি দেশের মধ্যে ১৩ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। পিপিপির ভিত্তিতে ২০১৮ তে দেশের মোট GDP ছিল ৭০,৪১৬ কোটি ডলার যা সিঙ্গাপুর, হংকং ও নিউজিল্যান্ড থেকেও বেশি ছিল। ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশের নামীয় জিডিপি ছিল মোট ২৭৯৬৪ বিলিয়ন ডলার যা ২০২৫ সালে ৫১৯৫৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায়।
("World Economic Outlook" report of IMF, April, 2019: বলছে ৭.৩% GDP growth নিয়ে 'বাংলাদেশের বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ')
"World Trade Statistical Review" of WTO (2019): বলছে অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ। গত এক দশকে দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৯.৮% বেড়েছে। বিশ্ববাণিজ্যে আমদানি ও রপ্তানিতে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৩০ ও ৪২ তম দেশ।
ইপিবির তথ্য বলছে করোনার ক্ষতি স্বত্ত্বেও ১১% প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার। ১৮-১৯ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় ৪০.৫৪ বিলিয়ন ডলার ও প্রবৃদ্ধি ১০.৫৫% যা বিগত অর্থ বছরে ছিল ৩৬.৬৭ বিলিয়ন ডলার ও ৫.৮১%।
বাংলাদেশে ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮.২১ বিলিয়ন ডলার যা বিগত দুটি অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ১৬.৪০ ও ১৪.৯৮ বিলিয়ন ডলার।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উঠেছে। ২০১৮ সালের ১৬ই মার্চ জাতিসংঘের LDC ভুক্ত দেশের তালিকায় থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে পর পর ৫টি অর্থ বছরে বাংলাদেশ ৭% এর বেশি GDP growth রাখতে পেরেছে {যদিও করোনার প্রকোপে সর্বশেষ দুটি অর্থবছরে এই হার কমে আসে}: (৮.১৩>৭.৮৬>৭.২৮>৭.১১>৬.৫৫>৫.২৪) এবং একই সাথে মূল্যস্ফীতিও কম রাখতে পেরেছে (বর্তমানে ৫.৪৭%)। ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.৫১% উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
এবার দেখা যাক কর্মসংস্থানের ব্যাপার। এক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি নেই। তবে চলমান বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এক্ষেত্রে সরকার কাজ করছে। ২০১৭-১৮ তে ৮.৮০ লাখ লোক বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গমন করেছে। মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত গিয়েছে ৫.৫৭ লাখ। দেশের কৃষি খাতে জনশক্তির ক্রমহ্রাসমান অবস্থা প্রমাণ করে অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। দেশের মোট ৬.৩৫ কোটি (পুরুষ ৪.৩৫ কোটি) কর্মক্ষম জনশক্তির মধ্যে ৬.০৮ কোটি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে। এছাড়াও শ্রম আইন (২০০৬ এর সংশোধিত)-২০১৮, গৃহকর্মী সুরক্ষা কল্যাণ নীতিমালা ২০১৫, ILO-RMG কর্মসূচি ২য় ফেইজ, UNFPA এর সহায়তায় National Skill Development Council কর্তৃক চলমান Setting Standard for Life Skills Training প্রকল্প, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উত্তরবঙ্গের ৫টি জেলার (লাল-নীল-রং-কুড়ি-গাই) ১০,৮০০ নারী যুব মহিলাকে গার্মেন্ট ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্দেশ্যে Northern Areas Reduction of Poverty Initiatives (NARI) প্রকল্প, ২০১৭-২০ মেয়াদে Gender Equality & Women's Empowerment at Work Place প্রকল্প, বিডার উদ্যোগে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সরকার করে যাচ্ছে। এছাড়াও চলতি বাজেটে উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০৩০-২০৩২ পর্যন্ত ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা দেশে বিদ্যমান থাকবে। আর এই সুবিধা কাজে লাগাতেই এতো পদক্ষেপ। ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ এর মধ্যে দেশীয় কর্মসংস্থান ১.৮০ বিলিয়ন এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ০.৭২ বিলিয়নে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এছাড়াও গোল ৯ এর সাথেও এর সমন্বয় রয়েছে।
Goal-9: Build resilient infrastructure, promote inclusive & sustainable industrialization and foster innovative. এতে ৮টি টার্গেট রয়েছে। (প্রতিটি টার্গেট উল্লেখ করার মতো কিছু না। ঘুরেফিরে একই কথা)
বাংলাদেশের অর্জন:
এক্ষেত্রে অর্জন এখনও দৃশ্যমান নয়। তবে কাজ যা হচ্ছে তা শেষ হলে দেশের চেহারাই বদলে যাবে বলে ধারণা। যেমন:
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল: দেশি বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে ২০৩১ এর মধ্যে সারাদেশে ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে ২৮ টির (সরকার ১৩, বেসরকারি ১৫) কাজ জোরেশোরেই চলছে। বেজার সর্বশেষ তথ্য মতে ৫,৭৪,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যেই বেসরকারি ১০ টিতে ২১,২৫৭ টি কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে ১০ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। এছাড়াও বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে ১৭৮৪ কোটি ডলারের (বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতেই ১২৩৯)।
প্রধানমন্ত্রীর মেগা দশ প্রকল্প:
১) পদ্মা সেতু: ২৪-০৯-২০১৯ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৭% (জুন, ২০২১ পর্যন্ত)। মোট বরাদ্দ ৩০,১৯৩ কোটি টাকা। মোট ৪১ টি স্প্যান বসায় মূল সেতুর ৬.১৫ কিলোমিটারের এখন দৃশ্যমান। সেতু চালু হলে GDP growth ১.২৩% বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২) পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ: কাজ হয়েছে ২৩.৪৭%
৩) মেট্রো রেল: কাজ হয়েছে ২৬.২০% ও শেষ হবে ২০২৪ সালে। মোট ব্যয় ২১৯৮৫ কোটি টাকা।
৪) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: কাজ হয়েছে ১৩.৯৫%, শেষ হবে ২০২৫ সালে, মোট ব্যয় ১,১৩,০৯৩ কোটি টাকা।
৫) রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: কাজ হয়েছে ২২.৮০%, শেষ হবে ২০২০ এ
৬) মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: কাজ হয়েছে ২১.১৫%, শেষ হবে ২০২৩
৭) চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল সংযোগ: কাজ হয়েছে ১৮.৪৭%, শেষ হবে ২০২২
৮) পায়রা সমুদ্রবন্দর: কাজ হয়েছে ৩৮.১৮%, শেষ হবে ২০২০ এ
৯) সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর: কাজ শুরু হয়নি।
১০) মহেশখালী LNG Terminal: গত বছর কাজ সমাপ্ত।
এছাড়াও,
Dhaka Mass Rapid Transit প্রকল্পের অধীনে ঢাকার যানজট নিরসনে ৫টি MRT বা মেট্রো রেল নির্মাণ করা হবে যার একটির (উড়াল) কাজ বর্তমানে চলছে। পাতাল এবং উড়াল-পাতাল এর কাজ ২০৩০ এর মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ Dhaka Elevated Express Way এর নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে। এতে ব্যয় হবে ৮,৯৪০ কোটি টাকা। গাজীপুর হতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের Bus Rapid Transit এবং ঢাকা-আশুলিয়া ২৪ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩.৪০ কিলোমিটারের টানেল তৈরির কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে। এর কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে।
সুতরাং এসডিজির ২০৩০ সময়সীমার মধ্যেই এই গোলের অধিকাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে যদি উক্ত বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ ২০৩০ এর মধ্যে শেষ করা যায়।
Goal-10: Reduce inequality within & among countries: এর ১০ টি টার্গেট রয়েছে। বাংলাদেশ গোল ১, ২ ও ৫ এর সাথে সমন্বয় করে এই ১০ নং গোল পূর্ণ করার চেষ্টা করছে।
Goal-11: Make cities & human settlement inclusive, safe, resilient & sustainable: এর টার্গেট রয়েছে ১০টি। বাংলাদেশ গোল ১, ২, ৫, ৯ এর সাথে সমন্বয় করে এই ১১ নং গোল পূর্ণ করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও গত নির্বাচনে বর্তমান সরকারের "আমার গ্রাম আমার শহর" শ্লোগানে নির্বাচনী এশতেহারে এই গোল পূরণের অঙ্গীকার লক্ষ্য করা যায়। সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদ এর ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।
Goal-12: Ensure sustainable consumption & production patterns. এর ১১ টি টার্গেট রয়েছে। বাংলাদেশ গোল ১, ২, ৩ ও ৬ এর সাথে সমন্বয় করে এই ১২ নং গোল পূর্ণ করার চেষ্টা করছে।
Goal-13: Take urgent action to combat climate change and it's impact. এতে ৫টি টার্গেট রয়েছে। অন্যান্য গোলের সাথে রিলেটেড হওয়ায় এর টার্গেট কম। এই গোলটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সবগুলো টার্গেট মনে রাখা দরকার।
টার্গেট:
a) strengthen resilience & adaption capacity to climate related hazards & natural disasters.
b) integrate climate change measure into national policies, strategies & planning.
c) improve education awareness raising & human and institutional capacity on climate change mitigation, adoption, impact, reduction and warning.
d) Fulfill the commitment to provide $100 billion from Green Climate Fund by 2020 under UNFCCC (From developed to developing)
e) Taking climate related policies concerning women, youth, marginalized people in LDCs
Goal 14: Conserve & sustainably use the ocean, seas & marine resources for sustainable development. এতে ১০ টি টার্গেট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য: remove marine pollution by 2025, ensure security of marine & coastal areas and save at least 20% of it by 2020, remove acidification of marine areas, sustainable marine fishing, increase economic benefit from marine resources, increase scientific knowledge by marine technology, using marine resources concerning "Future We Want" of UNCLOSE.
Goal 15: Life on land. এতে ১২ টি টার্গেট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য: secure territorial & inland freshwater, forest, mountain, dryland, combat desertification, deforestation, drought, flood, halt the loss of biodiversity & protect the threatened species by 2020, urgent action against illegal poaching & trafficking.
Goal 13, 14 & 15 মূলত একই সূত্রে গাঁথা। তাই এগুলো একসাথেই আলোচনা করা হলো।
Goal 13+14+15 বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখযোগ্য:
১) ১৫ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আর্টিকেল ১৮ক যুক্ত করা।
২) ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের ৭০ তম সাধারণ পরিষদ কর্তৃক পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন অফ দি অর্থ পুরস্কার প্রাপ্তি।
৩) সমুদ্রসীমা বিজয়ে ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর South-south award লাভ।
৪) সমন্বিত পরিকল্পনা হিসেবে ২০০৯ সালে Bangladesh Climate Change Strategy & Action Plan প্রণয়ন (উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে)। এর অধীনে ৬ টি থিমেটিক অঞ্চলে ৪৪ টি কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে। এলডিসি ভুক্ত দেশের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে climate change trust fund গঠন করেছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত এ খাতে বরাদ্দ ৩,৫০০ কোটি টাকা।
৫) দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে UNFCCC এর নীতিমালার অধীনে National Adaption Plan প্রণয়ন করা হয়েছে।
৬) বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০: এটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। নেদারল্যান্ডসের সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। টেকসই পানি, প্রতিবেশ, পরিবেশ ও ভুমি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলা করে ২০৩০ এর মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই এই বদ্বীপ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য। এই পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য ৬টি:
ক) বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হতে রক্ষা।
খ) পানির নিরাপত্তা ও পানির ব্যবহারের অধিকতর দক্ষতা বৃদ্ধি।
গ) সমন্বিত ও টেকসই নদী অঞ্চল ও মোহনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
ঘ) জলাভুমি ও Biodiversity সংরক্ষণ ও তাদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
ঙ) অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যকরী ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
চ) ভুমি ও পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা।
বদ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় ৮০ টি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। প্রকল্প গুলোকে ৬ টি ভৌগোলিক হটস্পট অঞ্চলে কার্যকর করা হবে। যেমন:
ক) উপকূলীয় অঞ্চল।
খ) বরেন্দ্র ও খরা প্রবণ অঞ্চল।
গ) হাওর ও আকস্মিক বন্যা কবলিত অঞ্চল।
ঘ) পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল।
ঙ) নদী ব্যবস্থা ও নদীমুখ অঞ্চল।
চ) নগর অঞ্চল।
"প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত টেকসই দারিদ্র্য হ্রাসে ডেল্টা প্লান-২১০০ হতে পারে একটি গেইম চেঞ্জার" (৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা)
৬) Green Climate Fund থেকে অর্থ প্রাপ্তির লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে National Designed Authority Secretariat প্রতিষ্ঠা। ইতোমধ্যেই IDCOL & PKSF জলবায়ু অর্থায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কতৃপক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গতবছর এই ফান্ড বাংলাদেশকে ৮৫.৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৩ টি প্রাক্কলিত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
৭। জলবায়ু উদ্বাস্তদের সহায়তা প্রকল্পঃ কক্সবাজারের “খুরুশকূল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের” অধীনে নামমাত্র মূল্য ১০০১ টাকার বিনিময়য়ে ২০,০০০ জলবায়ু উদ্বাস্তদ পরিবারকে পাঁচ তলা বিশিষ্ট্য মোট ১৩৭ টি ভবনে আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই ৬০০ পরিবারকে পাঁচ তলা বিশিষ্ট্য ২০ টি ভবন প্রদান করা হয়েছে (২৩ জুলাই, ২০২০)
৮) এছাড়াও বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৭ প্রণয়ন, National Biodiversity Strategy & Action Plan 2016-2021 গ্রহণ, ১৩ টি Ecologically Critical Area চিহ্নিত করা ১৯৯০ সালে Montril Protocol এ স্বাক্ষর করা ও ১৯৯৬ সালে এ বিষয়ে সেল প্রতিষ্ঠা, ২০২০ এর মধ্যে মোট ভুমির ২০% বনভূমি নিশ্চিত করা (বর্তমানে ১৭.৫০% যা ২.৩২ মিলিয়ন হেক্টর), সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ কাজ করছে।
Goal-16: peace, justice and strong institutions. এতে ১২ টি টার্গেট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য: reduce violence & death, end abuse, exploitation, trafficking & child torture, promote rule of law at national & International level, reduce illegal financial & arms flow, reduce corruption & bribery, accountable and transparent institutions, legal identity for all, access to information and protect fundamental freedom, combat terrorism and crimes.
বাংলাদেশের অর্জন: সত্যি বলতে এই গোলটির বাস্তবায়ন ব্যাপক এবং এর বাস্তবায়ন এতোটা সহজও নয়। তবুও ২০১৯ এর ৩০ ও ৩১ জুলাই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটির {Committee Against Torture (CAT)} বৈঠকে এ ব্যাপারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জবাব দিয়েছেন, যেমন:
CAT এর সনদে বাংলাদেশ ১৯৯৮ তে বর্তমান সরকারের আমলেই স্বাক্ষর করেছিল। এর পর প্রতি ৪ বছর অন্তর রিপোর্ট পেশ করার দায়িত্ব ছিল পরবর্তী সরকারের উপর। কিন্তু তা হয়নি। এরপর ২০০৯ এর পর থেকে বর্তমান সরকার ক্যাটে রিপোর্ট প্রকাশ করতে না পারলেও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সনদ সংশ্লিষ্ট কমিটিতে সরকার ৭ টি প্রতিবেদন প্রেরণ করেছে। এছাড়াও ২৩ জুলাই ক্যাটেও সরকার প্রতিবেদন প্রেরণ করেছে। সরকার নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছে। এ ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। RAB এর বিরুদ্ধে ৯৪ টি অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৫ তম সংশোধনীর পর সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ পুরোপুরি ক্যাটের নীতিমালার সাথে মিলিয়ে নির্ধারিত হয়েছে। ১৯৭৪ এর Special Power Act এর অধীনে ৯০ দিন আটকের বিষয়টি বর্তমানে প্রায় শূন্যের কোঠায় রয়েছে। এছাড়াও দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন, ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থা চালু, ভুমি ব্যবস্থাপনায় ই নামজারি সহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়াও সরকার তার প্রশাসনিক মান উন্নয়নে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র গ্রহণ, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ের সকল দপ্তরে 'বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি', তথ্য অধিকার আইনের আওতায় তথ্যের সহজলভ্য নিশ্চিত করা, ভূমি ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন, ই-টেন্ডারিং চালু সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একি সাথে ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এসব পদক্ষেপের সুফল হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের World Governance Indicators Report - 2019 এর ছয়টি সূচকের তিনটিতেই (দুর্নীতি দমন, আইনের শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সংঘাতের অনুপস্থিতি) বাংলাদেশ উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে।
Goal-17: Partnership for the goal: এতে ১৯ টি টার্গেট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য: উন্নত দেশগুলোর কর্তৃক LDCs কে official development assistance দেয়ার কমিটমেন্ট রক্ষা। Increase domestic capacity to improve tax & revenue collection, assist developing countries to attain long term debt capacity, taking investment promotion regime for LDCs, enhance North-Southe, South-South & triangular regional & International cooperation, open, non discriminatory & equitable multilateral trading system under WTO, duty free & quota free market access for LDCs
বাংলাদেশের অর্জন: এই গোলটি মূলত উন্নত দেশগুলোর জন্যই বেশি প্রযোজ্য। তবুও বাংলাদেশ BIMSTEC, SAARC, BBIN, BCIM, ESCAP, D-8 CIRDAP সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এছাড়াও ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ৭৩০৫ বিলিয়ন টাকা (২০২০ এ ছিল ২৬৩০ বিলিয়ন) এবং কর রাজস্ব প্রাপ্তি ৬৩৭০ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। অন্যদিকে এলডিসি থেকে উত্তরণের অভিজ্ঞতা শেয়ারে বাংলাদেশ এর সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল চুক্তি সহ ট্রিপস, ইউপো, সাপটার মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনীতির বহুমুখী প্রসারে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।
পরিশেষে বলা যায় SDG'র কোন একটি গোল সম্পূর্ণ পূরণ করার সময় এখনও পার হয়নি। ২০৩০ এর মধ্যে আশা করা যাচ্ছে বাংলাদেশ বেশ কিছু গোল অর্জন করতে পারবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৭৩-১৯৭৮) মুখবন্ধে লিখেছিলেন:
No plan, however, well formulated, can be implemented unless there is a total commitment on the part of the people of the country to work hard and make necessary sacrifices. All of us will, therefore, have to dedicate ourselves to the task of nation building with single minded determination"
বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্য ধরেই বর্তমান সরকার এসডিজি বাস্তবায়ন সহ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতেই দ্বিতীয় বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১, ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা, বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

Post a Comment

0 Comments