Balance of Power (শক্তির ভারসাম্য)

Balance of Power (শক্তির ভারসাম্য) 

শক্তির ভাবসাম্য কৌশল

শক্তির ভাবসাম্য একটি দেশের কৃটনীতির ক্ষেত্রে অনুসৃত কৌশল। একটি রাষ্ট্র যদি তার  বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এরূপ  কৌশল অবলম্বন করে কিংবা করার চেষ্টা করে যাতে তার নিজের  রাজনৈতিক , অর্থনীতিক  ও সামরিক শক্তিকে আর কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠীর অনুরূপ শক্তি অতিক্রম করে যেতে  না পারে  তাহলে এই কৌশলকে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল বলা হয়। 

উনবিংশ শতকের শেষার্ধ  থেকে প্রথম মহাযুদ্ধ পর্যস্ত বৃটিশ সরকার ইউরোপের ক্ষেত্রে এই কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেছিল। 



১৮৭১ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পধস্ত জার্মানী, অস্ট্রিয়া, ইতালী ত্রয়ীজোটের বিরুদ্ধে ব্রিটেন বৃটিশ-ফরাসী-রুশ ত্রিপক্ষীয়  আতাত গড়ে তোলে। প্রথম মহাযুদ্ধের পর শক্তির ভারসাম্য বিশ্বরাজনীতি ও কৃটনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব  লাভ করে। বস্তুত শক্তির ভারসাম্য তত্ত্ব অনুযায়ী প্রতিপক্ষ বা বিরুদ্ধবাদী শক্তির সমান শক্তি অর্জনের মাধামেই আগ্রীসন বন্ধ ও শাস্তি বজায় রাখা সম্ভবপর । ঠান্ডাযুদ্ধকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক ধরনের শক্তির ভারসাম্য বিরাজ করতো । সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি তথা সমাজতস্ত্রের পতনের পর সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে একধরনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ঠেকানোর মতো কোন দেশ তো দূরের কথা, কোন জোটও শীত্র আবির্ভূত হবে বলে মনে হয় না। শক্তির ভারসাম্যের প্রতিযোগিতায় বেধে যাচ্ছে আঞ্চলিক  যুদ্ধ, সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজনা, দেশে দেশে ঘটছে অভ্যন্তরীন গোলযোগ, তীব্রতর হচ্ছে স্নায়ু যুদ্ধ ।  শুধু আর্দশ নয়, অনেক ক্ষেত্রে বাজারের প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক স্বার্থবোধও শক্তির ভারসাম্যের কৃটনীতিকে তীব্রতর করে দিচ্ছে । এ জন্য অনেক ক্ষেত্রে ভারসাম্যের আওতায় ঘটছে উপ-ভারসাম্য ৷ দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন শক্তি ও সমীকরন। যেমন চীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংগে কৌশলগত মিত্রতার পথ বেছে নিয়েছিল। পেট্রোডলারের শক্তিতে বলিয়ান দেশসমূহ এখনো শক্তির ভারসাম্যে নিজেদের শক্তিকে প্রমান করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পাকিস্তান ও ভারতের, আনবিক শক্তির ভারসাম্যের রাজনীতিই এতদঞ্চলের যাবতীয় ঘটনাবলীর নিয়ামক । শক্তিসাম্য বজায় থাকলে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে যুদ্ধ পরিহারে বাধ্য করা যায়, ছোট রাষ্ট্রগুলো স্বাধীন স্বত্তী বজায় রাখতে পারে এবং কোনও শক্তিশালী রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী সারা বিশ্বে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয় না। তবে কার্যত অনেক সময় উক্ত সুফলগুলো ফলেনি। সেজন্য স্থায়ী শান্তি স্থাপনে বিশ্বাসী অনেকে শক্তিসাম্যনীতির বিরোধী । তাদের মতে এই প্রথা ক্ষমতার ছন্বকে বাচিয়ে রাখে, সামরিক প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্রগুলো জড়িয়ে যায় এবং ফলতঃ যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে । যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উদ্ড্রো উইলসন শক্তিসাম্যের পরিবর্তে শান্তিকামী সংগঠিত রাষ্ট্রসমবায় স্থাপনের যৌক্তিকতা প্রদর্শন করেন। উক্ত মতের সমর্থক জওহরলাল নেহরু শক্তিসাম্য নীতির পথ অনুসরন না করে নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির পথ বেছে নেন। 

Post a Comment

Previous Next

نموذج الاتصال