মিথিলার কবি : বিদ্যাপতি
বর্তমান ভারতের উত্তর বিহারের তিরহুত জেলা এবং দক্ষিণ নেপালের কিছু অংশ নিয়ে ছিলো এক প্রাচীন রাজ্য। রাজ্যের নাম বিদেহ। পূর্ব দিক দিয়ে মহানন্দা নদী, দক্ষিণে গঙ্গা, পশ্চিমে গান্দকি নদী আর উত্তরের হিমালয়ের নিম্নভূমি দিয়ে বেষ্টিত ছিলো এই রাজ্য। বিদেহ রাজ্যের রাজধানী ছিলো মিথিলা।
রামায়নে মিথিলার কথা উল্লেখ আছে । মিথিলা রাজা জনকের নামানুসারে জনকপুরী ও জনকের কন্যা বলে সীতাদেবীর আরেক নাম হল জানকী৷ এখনো নেপালে জনকপ্রাসাদ আছে৷ ।
প্রাচীন কালে মিথিলা ছিল এই অঞ্চলের শিল্প- সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র । বাংলার শিল্প- সাহিত্য প্রেমীরা বিদ্যার্জনের জন্য মিথিলা যেত ।
মৈথিলি ভাষা
মিথিলার মানুষজন যে ভাষায় কথা বলতো তার নাম মৈথিলি। বিদেহ রাজ্যের মহাকবি ছিলেন বিদ্যাপতি, তিনি মৈথেলী কবি কোকিল নামেও সুপরিচিত। তিনি মৈথেলি ভাষা ও সংস্কৃত ভাষার একটা মেলবন্ধনে কবিতা লিখতেন। সে ভাষায় রাধা-কৃষ্ণ, সনাথ-ব্রজমন্ডলের লীলা বিবৃত হতো বলে সে ভাষার নাম দেয়া হলো ব্রজবুলি।
ব্রজবুলি ভাষা
ব্রজবুলি হলো একধরনের কৃত্রিম মিশ্রভাষা । এটিকে তৎকালীন সাহিত্যের দ্বিতীয় কাব্যভাষা বা উপভাষাও বলা যায়। এই ভাষাতে মৈথিলি ও বাংলার মিশ্রণ রয়েছে। স্বয়ং চৈতনদেবেও তাঁর পদাবলী শুনে মুগ্ধ হতেন । আধুনিক যুগে বজ্রবুলি ভাষায় পদাবলী লিখেছেন রবী ঠাকুর ‘ভানুসিংহের পদাবলী নামে ।
মিথিলার কবি : বিদ্যাপতি
মিথিলার কবি হলেন বিদ্যাপতি । তিনি মূলত পঞ্চদশ শতকের কবি । মিথিলার রাজা কীর্তি সিংহ তাঁকে সভাকবি হিসিবে নিযুক্ত করেন। বিদ্যাপতি অসাধারণ কবি ছিলেন । তিনি মূলত বৈষ্ণব পদাবলীর আদি রচয়িতা , পদসঙ্গীত ধারার প্রবর্তক এবং প্রথম অবাঙালি কবি।
প্রাচীন কালে বাংলা থেকে যারা মিথিলায় যেত তারা ফিরে আসত বুক ভরে বিদ্যাপতির কবিতা নিয়ে । এজন্যই তিনি বাংলায় এক পঙক্তি না লিখেও বাংলার কবি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন ।
তাঁর কবিতায় মুগ্ধ হয়ে রাজা শিব সিংহ তাঁকে ‘কবি কণ্ঠহার’ উপাধি প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি মিথিলার কোকিল , অভিনব জয়দেব , পদাবলীর কবি হিসেবে পরিচিত ।
.
তিনি মূলত ব্রজবুলি ভাষায় পদাবলী লিখতেন ।
বিদ্যাপতির বিখ্যাত গ্রন্থাবলী হলো:
পুরুষপরীক্ষা , কীর্তিলতা , গঙ্গাবাক্যাবলী , ভাগবত ।
ব্রজবুলি ভাষায় তাঁর একটি পদ হলো :
‘‘এ সখি হামারি দুঃখের নাহির ওর ।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর’’ !!
==========
মনে রাখুন :
0 Comments