গ্রীন ব্যাংকিং ও বাংলাদেশ (Green Banking in Bangladesh )

গ্রীন /সবুজ ব্যাংকিং ও বাংলাদেশ 

Green Banking in Bangladesh

গ্রীন ব্যাংকিং হচ্ছে পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একদল উদ্যোক্তা শ্রেণী কর্তৃক গৃহীত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ।বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে সারা পৃথিবী  মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই কারনে  সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে “পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন” ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো সবুজ ব্যাংকিং তথা পরিবেশবান্ধব সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা ও টেকসই উন্নয়ন।

গ্রীন ব্যাংকিং কি ?

গ্রীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলো এক ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা যা থেকে দেশ ও জাতি পরিবেশগতভাবে সুবিধা পায়। বৈষয়িক উষ্ণতা, জলবায়ুর পরিবর্তন, গ্রিন হাউজের প্রভাব, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, গৃহস্থালির বর্জ্য, প্রাকৃতিক-দুর্যোগ এগুলো মূলত পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।। গ্রীন ব্যাংকিং এসবের ক্ষতিকর প্রভাব হতে পরিবেশকে রক্ষা করবে। এজন্য গ্রীন ব্যাংকিং কে বলা হয় পরিবেশ বান্ধব ব্যাংকিং। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করা এর প্রধান উদ্দেশ্য। মুলত গ্রীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলো এক ধরনের ব্যাংকিং যা থেকে দেশ ও জাতি পরিবেশগতভাবে সুবিধা পায়।
গ্রিন ব্যাংকিং তথা সবুজ ব্যাংকিং এর মুল  উদ্দেশ্য পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার। বিদ্যুৎ, পানি, কাগজের খরচ কমানোর উপযোগী প্রতিষ্ঠান ও কারখানা সবুজ শিল্প হিসেবে বিবেচিত। 
গ্রীন ব্যাংকিং ব্যবস্থার মূল লক্ষ্যই পরিচালিত হয় জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭ টি লক্ষ্য অর্জনকে বিবেচনা করে

 দেখে নিন-  

গ্রীন ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপঃ

১) বর্জ্য এড়ানো এবং পরিবেশ ও সামাজিক অগ্রাধিকার।
২) পরিবেশবান্ধব উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং উদ্ভাবনী ও টেকসই উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া।
৩) প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
৪) ব্যাংকের অভ্যন্তরে এবং বহিঃস্থানে কাগজের ব্যবহার যতসম্ভব সীমিতকরণ।
৫) অনলাইন ব্যাংকিং এর প্রাধান্য।

গ্রীন ব্যাংকিং অনুশীলনের দুটি উপায় রয়েছেঃ

একটি হলো-: অনলাইন ব্যাংকিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন,শারীরিক বৈঠকের পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্সয়ের জন্য ওয়েবক্যাম ব্যবহার, অনলাইন বিবৃতি, ই-মেইল করার নথি।
অন্যটি হলো-: সবুজ বিল্ডিং, সবুজ প্রকল্পের অর্থায়ন, বৃক্ষ রোপণ, ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম।

বাংলাদেশ এ গ্রীন ব্যাংকিং 

সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।পরিবেশ বিপর্যয় রোধকল্পে ও পৃথিবীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে  বাংলাদেশ ব্যাংক শক্তিশালী ও টেকসই ব্যাংক ব্যবস্থার স্বার্থে বিশ্বমানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং নীতিমালা ২০১১ সালে প্রণয়ন করেছে। তিন পর্যায়ে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মূলত পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখেই এটি করা হয়েছে। বিশ্বের উন্নত সব দেশে এ সবুজকে ধরে রাখার মানসে ব্যাংকের এ বিষয়টি অনেক আগেই শুরু হয়েছে।

           নীতিমালা অনুসারে প্রথম পর্যায়ে  পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি ব্যাংক স্বতন্ত্রভাবে একটি সবুজ ব্যাংকিং বিভাগ বা অনুশাখা স্থাপন করা হয়। এ অনুশাখা ব্যাংকের পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম প্রণয়ন, মূল্যায়ন ও পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে।
            দ্বিতীয় পর্যায়ে পরিবেশ সংবেদনশীল বিভিন্ন খাতের বিষয়ে ব্যাংকের কৌশলগত নীতি প্রণয়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেসব খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে সেগুলো হলো কৃষি, কৃষি বাণিজ্য, চামড়া, মৎস্য, বস্ত্র ও পোশাক, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কাগজ ও মণ্ড, চিনি, নির্মাণ, গৃহায়ন, প্রকৌশল, ধাতব পদার্থ, রসায়ন, রাবার ও প্লাস্টিক, ইট প্রস্তুত, জাহাজভাঙা প্রভৃতি। এই পর্যায়ে ব্যাংকগুলোকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সবুজ শাখা স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। যেসব শাখা সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক আলো-বাতাস, জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতি ও পাখা, সীমিত পানি বিদ্যুৎ, পরিশোধিত পানি ব্যবহার করবে, সেগুলো সবুজ শাখা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃতি পাবে।
      তৃতীয় পর্যায়ে ব্যাংকগুলোকে পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বিশ্বের প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক যার গ্রীন ব্যাংকিং উন্নয়নে অতি পরিচ্ছন্ন ধারণা রয়েছে।

বাংলাদেশ এ গ্রীন ব্যাংকিং এর বর্তমান অবস্থাঃ

  • ব্যাংকগুলোর ১০ হাজার ৩৪২টি শাখার মধ্যে ৯২৫১ টি শাখা অনলাইন ভিত্তিক যা মোট শাখার ৮৯.৪২%।
  • ব্যাংকগুলোর ৫৬৯ টি শাখা সৌরবিদ্যুতের আলোয় পরিচালিত হচ্ছে।
  • বর্তমানে ৭ হাজার ১৫ টি এটিএম বুথের মধ্যে ৯৫ টি সৌরশক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
  • সবুজ শিল্পে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সবুজ অর্থায়ন ও ব্যাংকের অভ্যন্তরে সবুজ চর্চায় এগিয়ে থাকা ব্যাংগুলো হলঃ

শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক, MTB, Brack bank, Trust bank, Dutch bangla bank ইত্যাদি।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতে গ্রীন ব্যাংকিং নিয়ে ইংরেজিতে কিছু স্লোগান প্রচলিত আছে, যথা:
Save paper, save trees.
Pay your bills online.
Think before you press the button.
Unplug electronic devices while not in use.
Congerve energy, congerve natural resources.
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ ব্যাংকিং বিষয়ে সক্রিয়তা এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে উৎসাহিত করেছে। আর সবুজ ব্যাংকিং এর কার্যক্রম বাড়তে থাকলে পৃথিবী হয়ে উঠবে আরও পরিবেশবান্ধব।

Post a Comment

0 Comments