পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাংলা রচনা


    পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
    পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব 

    বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে বর্তমানে সরকার বেশ কয়েকটি মেঘা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, গুরুত্ব বিবেচনায় এই প্রকল্পগুলােকে মেগা প্রজেক্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সরকার। এগুলাের মধ্যে পদ্মাসেতু অন্যতম। 

    পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে শিল্পায়ন ও বানিজ্যিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় তিনকোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসবে।

    বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ বা কমপক্ষে তিনকোটি মানুষ সরাসরি এই সেতুর মাধ্যমে উপকৃত হবে।এতে বলা হয়, এই সেতুর মাধ্যমে আঞ্চলিক বাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে, পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচন হবে এবং উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি গতি ত্বরান্বিত হবে। দেশের ওই অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব গড়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমবে।
    আরেক সমীক্ষায় এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) নির্মানের ফলে দেশের আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে লক্ষনীয় অগ্রগতি হবে।এই সেতু চালু হলে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, যানবাহন রক্ষনাবেক্ষন, জ্বালানী ও আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে।
    এডিবি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সেতুর মাধ্যমে শিল্পায়ন ও বানিজ্যিক কর্মকাণ্ড প্রসারের লক্ষ্যে পুঁজির প্রবাহ বাড়বে, পাশাপাশি স্থানীয় জনগনের জন্য অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।এছাড়াও স্থানীয় জনগন উন্নততর স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের জন্য খুব সহজেই রাজধানী ঢাকা যেতে পারবেন।

    এডিবি’র মতে, এই সেতুর ফলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং আঞ্চলিক জিডিপি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
    ভারতের ‘ইকোনমিক টাইমস’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এই সেতুটি (পদ্মা সেতু) বাংলাদেশের জন্য গৌরবের এবং অর্থনীতির জন্য যুগান্তকারি ঘটনা। যা ২০২১ সালের মধ্যে দেশটিকে ‘মধ্যম আয়ের’ দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
    নিউইয়র্ক ভিত্তিক আমেরিকান সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স (এএসএমই)-এর মতে, এই সেতুটি (পদ্মা সেতু) রাজধানী ঢাকা ও তুলনামূলকভাবে উন্নত অন্যান্য এলাকার সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের রূপান্তর ঘটাবে।এতে আরও বলা হয়, ঢাকা- কলকাতা (ভারত) সংযোগ সড়কে অবস্থিত এই সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ে এবং ইউরো-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সিস্টেমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হবে। - বাসস।

    এক নজরে পদ্মা সেতু 

    নদী

    পদ্মানদী 

    গঠন

    দ্বি-তলা সেতু

    বাহক

    যানবাহন, ট্রেন

    স্থান

    লৌহজং, মুন্সিগঞ্জএর সাথে শারিয়তপুর, মাদারীপুর

    সংযােগ

    মাওয়া (মুন্সিগঞ্জ), মাদারিপুর

    নকশা

    AECOM

    উপাদান

    কংক্রিট, স্টিল

    দৈর্ঘ্য 

    ৬.১৫ কিলােমিটার

    প্রস্থ

    ১৮.১০ মিটার 

    নির্মাণ শুরু

    ডিসেম্বর ৭, ২০১৪

    নির্মাণকারী

    চায়না মেজরব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কো. লি.

    নির্মাণ শেষ

    ২০২২

    পিলার

    ৪২টি

    স্পান

    ৪১টি (১৫০ মিটার

    প্রকল্প ব্যয়

    ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা

    প্রকল্পের অগ্রগতি

    মূল সেতু ৯২% ও প্রকল্প ৮৪%

    জিডিপিতে অবদান

    প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ১.২৩%

    পদ্মা সেতুর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব

       বাংলাদেশ এর অর্থনৈতিক উন্নয়নে পদ্মা সেতুর ভুমিকা :

    • অর্থনৈতিক উন্নয়ন: একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে সেই দেশের যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর। পদ্মা সেতু নি হলে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে সারাদেশের যােগাযােগ অনেক সহজ হয়ে আসবে। দেশের বাকি অংশের সাথে সড়ক যােগা। এই সেতু নিশ্চয়তা দেবে, ফলে যাতায়াতের সময় ও ব্যয় উভয়ই হ্রাসপাবে। নির্মিত হওয়ার ৩১ বছরের মধ্যে জিডিপি ৬ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৩২ সালের পর বাৎসরিক রিটার্ন ৩০০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। 

    • শিল্পায়ন: উন্নত যােগাযােগ ব্যবস্থাকে শিল্পায়নের প্রাণ বলা হয়। কেননা কাঁচা মালের সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিত প বাজারজাতকরণের জন্য প্রয়ােজন উন্নত পরিবহন ও যােগাযােগ ব্যবস্থা। তাই পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের শিল্প উন্নয়ন ত্বর হবে এতে কোনাে সন্দেহ নেই। যথাযথ গ্যাস সরবরাহ পেলে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চল দেশের বৃহত্তম অথনে অঞ্চল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    •  কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন: কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের অর্থ দেশের উন্নয়ন। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে পরিবহন ও যােগাযােগ বা সহজলভ্যতা কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে শাকসবজি চাষ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

    •  কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি: শিল্পায়ন, ব্যবসা খাতের পরিবহণ ও বাণিজ্য বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে পদ্মা সেতু। এতে করে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। প্রায় ২ কোটির অধিক বেকারের কর্মসংস্থান ঘটবে আশা করা হচ্ছে।

    •  সরকারি ব্যয়হ্রাস: ৫০% ভর্তুকি দিয়ে চালু রাখা ফেরি সার্ভিস চালু রাখা বন্ধ হবে এবং আদায়কৃত টোল সম্পূর্ণরূপে সরকার পাবে। ফলে প্রতিবছর সরকারের আয় বাড়বে প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ডলার।

    •  নদী ভাঙ্গন রােধ: পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য যে নদী শাসন হবে তার ফলে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ৯ হাজার হেক্টর জমি নদী ভাঙ্গন থেকে রেহাই পাবে। পাশাপাশি বন্যার কবল থেকেও রক্ষা পাবে কয়েক লক্ষ মানুষ। 

    • অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন: পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের অভ্যন্তরীণ যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এই অঞ্চলের জনগণের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ ও রাজধানী ঢাকায় আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের সুযােগ তৈরি হবে। সহজতর যােগাযােগ ব্যবস্থা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ ব্যবস্থাকে আরও বিকশিত করার মােধ্যমে মানব সম্পদকে আরও শক্তিশালী করবে। 

    • দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি উপকূলীয় জেলার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের যােগাযােগ শক্তিশালী হবে বা অভ্যন্তরীণ যােগাযােগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। ফলে ঐ অঞ্চলের কৃষি, যােগাযােগ, শিল্লায়ন, নগরায়ন, জীবনমান বৃদ্ধি পাবে যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাবে। 

    • আঞ্চলিক সহযােগিতা বৃদ্ধি: পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের অভ্যন্তরীণ যােগাযােগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যােগাযােগ সহজ হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে বাংলাদেশ ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং আন্তর্জাতিক যােগাযােগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে প্রতিবেশি দেশগুলাের সাথে আঞ্চলিক সহযােগিতা জোরদার হবে।

    সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, পদ্মাসেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এক বিশাল আশির্বাদ। একবিংশ শতাব্দীতে দেশের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলাের একটি এই পদ্মাসেতু নির্মাণ। 



    Post a Comment

    0 Comments