বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বুকলিস্ট (যেভাবে শুরু করবেন প্রস্তুতি)

 

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বুকলিস্ট (যেভাবে শুরু করবেন প্রস্তুতি)

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা ৩ টি ধাপেহয়। প্রথম ধাপে  ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেন প্রার্থীরা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে হয়। দ্বিতীয় দিতে হয় বিসিএস লিখিত পরীক্ষা।

প্রিলি পরীক্ষা আসলে কোন পরীক্ষাই নয়! জ্বি, ঠিকই পড়েছেন। প্রিলিমিনারিতে আপনি যতই ভালো করুন না কেন, ক্যাডার হবার দৌড়ে তা কোন কাজে আসবেনা। তাহলে বলুন তো, যে পরীক্ষা মূল রেজাল্টে কোন সাহায্যই করবেনা, সেটি পরীক্ষা হয় কি করে?

আরেকটা প্রশ্ন আসবে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্য কি?

উদ্দেশ্য একটাই, প্রার্থী কমানো। বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন জমা পড়ে কয়েক লাখ। ৪১তম  বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার পরীক্ষার্থী! এখন বিশাল সংখ্যক এই প্রার্থীদের তো লিখিত পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষার খাতা দেখতেই বছর চলে যাবে।

তাই সংখ্যাটা লাখের ঘর থেকে হাজারের ঘরে আনতেই প্রিলির তোড় জোড়। প্রিলি পরীক্ষায় ২০ হাজারের মতো প্রার্থী বাছাই করা হয়। শুধুমাত্র তারাই লিখিত পরীক্ষা দিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে প্রিলি পরীক্ষার বুকলিস্ট জেনে প্রস্তুতি শুরু করতে হয়।

ক্যাডার হবার জন্য লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মোট নম্বর গণনা করা হয়। লিখিত পরীক্ষা ৯০০ নম্বরের হয়। অপরদিকে ভাইবা পরীক্ষা ২০০ নম্বরের। তাই লিখিত পরীক্ষায় ভালো করলে আপনার ক্যাডার হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যাবে।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে, যে বইগুলো পড়বেন সেগুলো নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস

প্রথমে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবন্টন দেখে নিই। সাধারণ ক্যাডারে ৬টি বিষয় থেকে মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়।

আবশ্যিক বিষয়ের নামনম্বর
বাংলা২০০
ইংরেজি২০০
বাংলাদেশ বিষয়াবলী২০০
আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী১০০
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা১০০
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি১০০
মোট নম্বর৯০০
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবন্টন

প্রস্তুতির শুরুতেই বিগত বছরের বিসিএস প্রশ্ন গুলো সমাধান করে নিবেন। প্রশ্ন রিপিট হয়। রিপিট না হলেও একই প্রশ্ন প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে তুলে দেয়া হয়। বিগত বছরের প্রশ্ন পড়া থাকলে সেগুলো উত্তর করে সহজ হবে।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বইয়ের তালিকা:

  • বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “বাংলা” বিষয়
  • বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “ইংরেজি” বিষয়
  • বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা” বিষয়
  • বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “বাংলাদেশ বিষয়াবলী” বিষয়
  • বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “আন্তর্জাতিক  বিষয়াবলী” বিষয়
  • বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “সাধারণ বিজ্ঞান”বিষয়

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “বাংলা” বিষয়ের বুকলিস্টঃ

১।অ্যাসিওরেন্স/ওরাকল বাংলা গাইডঃ যেকোন একটি বাংলা গাইড পড়বেন।

২।লালনীল দীপাবলি (প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্য) ঃ এই বইটি ইতিহাসের জন্য খুবই বিখ্যাত। নির্ভুল তথ্য দেয়া আছে হুমায়ুন আজাদের এই বইটিতে। বইটি থেকে বাংলা ভাষার ইতিহাস পড়ে নিন।

৩।ভাষা ও শিক্ষা- হায়াৎমামুদঃ ব্যাকরণ, সারাংশ, ভাব-সম্প্রসারণ, রচনা এইবইটিতে সুন্দর ভাবে সাজানো আছে।

৪।শীকর- মোহসীনা নাজিলাঃগ্রন্থ সমালোচনা এই বইয়ে খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা আছে। পরীক্ষায় যদি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করে দেয়, তাহলে সেই বই না পড়ে থাকলে উত্তর দেয়া কঠিন। তবে বিগত কয়েক বছরে গ্রন্থের নাম উল্লেখ করে দেয় নি। গ্রন্থ থেকে নির্দিষ্ট উদ্ধৃতি তুলে দিয়েছে। শীকরের এইবই তে যে গ্রন্থ সমালোচনা দেয়া আছে এগুলো অনুশীলন করলে এই অংশ থেকে ভাল নম্বর পাওয়া যাবে।

৫।বাংলা-২য় পত্রঃ ৯ম-১০ম শ্রেণির বোর্ড বইটি এ টু জেড পড়ে ফেলবেন।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “ইংরেজি” বিষয়ের বুকলিস্টঃ

১। Master English. গ্রামারের জন্য এই বইয়ের বিকল্প নেই। জাহাঙ্গীর আলমস্যার অনেক গবেষণা করে বইটি লিখেছেন। এই বইয়ের সমমানের বই মার্কেটে আর একটাও  নেই!

২। A passage to English Language. যারা মাস্টার পড়তে চাননা, তারা জাকির হোসাইন স্যারের এই বইটি পড়তে পারেন। বেসিক গ্রামার থেকে শুরু  করে অনুবাদের নিয়ম সবই দেয়া আছে বইটিতে।

৩। English Paper Reading and Translation. অনুবাদের জন্য সবচেয়ে দরকারি পত্রিকা পড়া। প্রতিদিন ২টি পত্রিকার সম্পাদকীয় এবং মতামত অংশ ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করবেন। আবার বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করবেন। ইন্টারনেটে পত্রিকা গুলোর বাংলা, ইংরেজি দুই ভার্সনই পাওয়া যায়। সেখান থেকে মিলিয়ে ভুল বের করবেন। এভাবে অনুশীলন করলে অনুবাদের জন্য আলাদা কোন বই লাগবেনা।

৪। Assurance English Guide. অনুশীলনের জন্য এসিউরেন্স এর গাইড দেখতে পারেন। বাজারের অন্য গাইড গুলো থেকে এসিউরেন্স একটু ভালো এই বিষয়ে।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা” বিষয়ের বুকলিস্টঃ

১।ওরাকল গনিত গাইডঃ গাইড বই থেকে সিলেবাসের টপিক ধরে ধরে অনুশীলন করবেন।

২।ওরাকল মানসিক দক্ষতাঃমানসিক দক্ষতা প্রিলিতে ভালো করে পড়লে, লিখিত পরীক্ষায় বেশ কাজে দেয়। বিগত বছরের প্রশ্নের পাশাপাশি ওরাকলের বইটি অনুশীলন করলেই হবে।

৩।সাধারণ গনিতঃ ৯ম-১০ম শ্রেণির বই থেকে সিলেবাসের টপিক গুলো করবেন।

৪।যারা গনিতে দুর্বল, তারা ‘Khairul’s Basic Math’ বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন।বইটি তে খুবই সহজ ভাবে প্রতিটি প্রশ্ন বিশ্লেষণ করা আছে। অথবা “Math Tutor”  বইটি পড়তে পারেন। যেকোন ১টি পড়লেই চলবে।

৫। যারা probability, permutation & combination math-এদুর্বল, তারা Youtube থেকে  ‘Onno rokom pathshala (অন্য রকমপাঠশালা)’-র ভিডিও গুলো দেখে নিতে পারেন। Khan Academy ইউটিউব চ্যানেলে ও এগুলো সহজ ভাবে বিশ্লেষণ করা আছে। সেখানে দেখতে পারেন।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “বাংলাদেশ বিষয়াবলী” বিষয়ের বুকলিস্টঃ

১।অ্যাসিউরেন্স গাইড।অন্য প্রকাশনীর গাইডও পড়তে পারেন। তবে যেকোন একটি পড়বেন। মোটা মোটি সব বইয়েই একই তথ্য দেয়া।

২।বাংলাদেশের সংবিধান (ব্যাখ্যা সহ) – আরিফ খানের এই বইয়ে সংবিধান খুবই সহজভাবে উপস্থাপন করা আছে। পড়তে ভালো লাগবে।

৩।বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ঃ ৯ম-১০ম শ্রেণির এই বইটি খুবই জরুরী। বই থেকে সিলেবাসে অংশগুলো খুঁজে পড়তে হবে।

৪।বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতাঃ৯ম-১০ম শ্রেণির বই থেকে ইতিহাস সম্পর্কিত সব তথ্য পড়ে নিবেন। বোর্ড বইগুলোই সঠিক রেফারেন্স হিসেবে বিবেচিত হয় প্রশ্নকর্তাদের কাছে।

৫।অর্থনৈতিক সমীক্ষাঃএই সমীক্ষাটি খুবই জরুরী। প্রতি বছর অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে প্রশ্ন আসে।

৬।দৈনিক প্রথম আলোঃজাতীয়, সম্পাদকীয় পাতা, অর্থনীতি পাতা এগুলো প্রতিদিন পড়ে নিবেন। ভালো হয় যদি পাশাপাশি আরো একটি পত্রিকা পড়তে পারেন। তবে নূন্যতম ১টি  অবশ্যই পড়তে হবে।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “আন্তর্জাতিক  বিষয়াবলী” বিষয়ের বুকলিস্টঃ

১।অ্যাসিউরেন্স/মিলার’স গাইডঃ যেকোন ১টি গাইড কিনে পড়া শুরু করবেন।

২।আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বিষয়াদিঃ আব্দুল হাই স্যারের বইটিতে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দেয়া আছে।

৩।দৈনিক প্রথম আলোঃ আন্তর্জাতিক পাতা, সম্পাদকীয় পাতা পড়ে নিবেন। পাশাপাশি আরেকটি ইংরেজি পত্রিকা পড়তে পারেন। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রতিদিন লেখা থাকে। 

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার “সাধারণ বিজ্ঞান”বিষয়ের বুকলিস্টঃ

১।ওরাকল বিজ্ঞান গাইড। একক ভাবে ওরাকলের বিজ্ঞান বইটি পড়লেই পুরো বিষয়ের প্রস্তুতি হয়ে যাবে। বিস্তারিত ভাবে প্রতিটি অংশ আলোচনা করা হয়েছে।

২।সাধারণ বিজ্ঞানঃ ৮ম, -৯ম-১০ম শ্রেণির বই থেকে সিলেবাসের টপিক গুলো পড়ে নিতে হবে। প্রশ্ন কর্তারা রেফারেন্স হিসেবে সব সময় বোর্ড বইকে বিবেচনায় রাখেন।

৩।কম্পিউটারঃ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির যেকোন ২টি বই থেকে কম্পিউটার অংশ পড়ে নিলেই চলবে।

প্রতিটি বিষয়ে আলাদা করে ১টি নোট খাতা বানিয়ে নিবেন। প্রতিদিন পড়া শেষে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো লিখে রাখবেন। পরবর্তীতে নোট খাতা থেকে রিভিশন দিবেন।

যারা কারিগরি ক্যাডারে পরীক্ষা দিবেন তাদেরকে পদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অতিরিক্ত ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। এই ২০০ নম্বরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার বিষয়ে যা পড়েছেন সেগুলো পড়লেই চলবে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি কোর্সে নোট করে রাখেন, তাদের জন্য নোটগুলো বেশ সহায়ক হবে। আপনার কাছে নোট না থাকলে, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিন। ইন্টারনেটে বেশ কিছু সাইটে নোটস পাওয়া যায়। সেখান থেকে ও কিনতে পারেন।


Post a Comment

Previous Next

نموذج الاتصال