পদ্মিনী উপাখ্যান— রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৫৮)

পদ্মিনী উপাখ্যান— রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৫৮)

গ্রন্থের বিষয়বস্তু : মধুসূদনের পূর্বে একটি প্রথম বাংলা সাহিত্যের আখ্যানধর্মী কাব্য। পদ্মিনীর কাহিনি টডের 'Annals an Antiquities of Rajastahn' কাহিনি অবলম্বনে রচিত। আলাউদ্দিন কর্তৃক চিতোর আক্রমণ সতীত্ব রক্ষার জন্য পদ্মিনীর প্রাণ বিসর্জনের কাহিনি কে ঐতিহাসিক পরিবেশের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে পদ্মিনী উপাখ্যানে। এই কাব্যে ক্ষত্রিয়দের প্রতি রাণা ভীমসিংহের উৎসাহ বাণী স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তুলেছিল। কাব্যে মুসলমান শক্তির বিরুদ্ধে হিন্দু রাজপুতদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হিন্দু জাতীয়তাবাদের সুর ধ্বনিত হয়েছে যা গুপ্ত কবির যুগে সত্যিই অভিনব বিষয় বলা যেতে পারে পদ্মিনী উপন্যাসে বাংলা কাব্যের জগতে নবদিগন্ত সূচনা করেছে।


চরিত্র:

  • রানা রত্নসিংহ: চিতোরের রাজা
  • রানী পদ্মিনী: চিতোরের রাণী, অসামান্য সৌন্দর্যের অধিকারী
  • আলাউদ্দিন খিলজি: দিল্লির সুলতান
  • দেওপাল: চিতোরের সেনাপতি
  • গোরা: চিতোরের মন্ত্রী
  • মহম্মদ খান: আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি

কাহিনী:

  • রানী পদ্মিনীর অসামান্য সৌন্দর্যের কথা দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির কানে পৌঁছায়।
  • লোভী সুলতান রানীকে পেতে চিতোরের উপর আক্রমণ করে।
  • রানা রত্নসিংহ সাহসের সাথে যুদ্ধ করেন, কিন্তু চিতোরের পরাজয় ঘটে।
  • আত্মসম্মান রক্ষার জন্য রানী পদ্মিনী জীবনাহুতি দেন।
  • চিতোরের রানী ও অন্যান্য মহিলারা জওহর (আগুনে ঝাঁপ দেওয়া) দেয়
  • রানা রত্নসিংহ পরবর্তীতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করেন।

উল্লেখযোগ্য দিক:

  • রোমান্টিকতাবাদ ও দেশাত্মবোধের মিশ্রণ
  • বীরত্ব, ত্যাগ, আত্মসম্মান-এর মতো মূল্যবোধের প্রতিফলন
  • সাবলীল ও আবেগপূর্ণ ভাষা
  • বাংলা কাব্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন

সমালোচনা:

  • কিছুটা দীর্ঘ ও একঘেয়ে
  • ঐতিহাসিক ত্রুটি
  • চরিত্রায়নের অসম্পূর্ণতা

পরিশেষে:

ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও "পদ্মিনী উপাখ্যান" বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।



গ্রন্থের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ :


  • গ্রন্থটি টডের Annals and Antiquites of Rajasthan অবলম্বনে রচিত। তবে এর কাহিনি পুরোপুরি ঐতিহাসিক নয়।

  • এই গ্রন্থের ঐতিহাসিক পরিবেশ স্বাদেশিকতা, বীর রস ও করুণ রসে রচিত।

  • পদ্মিনী উপখ্যান রাজস্থানের জনপ্রিয় কাহিনি। তবে এই আখ্যান কাব্যের চরিত্রগুলি ও রচনারীতি উল্লেখ যোগ্য নয়।

  • কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর ইংরাজি কাব্য ও স্কট, মুর, বায়রন প্রমুখ কবিদের আদর্শে স্বদেশ প্রেম ও ইতিহাসকে অবলম্বন করে গ্রন্থটি রচনা করেন।

  • গ্রন্থটির দ্বারা মাইকেল মধুসূদন দত্ত অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

  • গ্রন্থটির বাণী মূর্তি প্রাণোজ্বল নয় বলে নবযুগের বার্তাবহ হয়ে উঠতে পারেনি, তবে বীর, রৌদ্র ও করুণরসের স্বচ্ছন্দ প্রকাশে তা স্মরণীয় হয়ে আছে।

Post a Comment

Previous Next

نموذج الاتصال