রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পেছনে কী ছিল? “Minsk Agreement”

 

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পেছনে কী ছিল?


“Minsk Agreement” কি?

অধিকাংশ রাশিয়ান বংশদ্ভুত দনেৎস্ক ও লুহানস্ক-এ স্বাধীনতাকামীদের উপর ইউক্রেনের জেনোসাইড থামানোর জন্য ২০১৪ সালে বেলারুশের মিনস্ক-এ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন, জার্মান চ্যাঞ্চেলর মর্কেল, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট প্রোসেঙ্কো এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলান্দ ১৬ ঘন্টা ম্যারাথন আলোচনার পর সাক্ষরিত হয় । সেই চুক্তির ১৩টি শর্ত ক্রমাগত ভায়োলেট করে আসছে ইউক্রেন।

Minsk agreement এর ধারাগুলো উল্লেখ করুনঃ

The 13 points of Minsk agreement:
An immediate and comprehensive ceasefire.
1. Withdrawal of all heavy weapons by both sides.
2. Monitoring and verification by the OSCE.
3. To start a dialogue on interim self-government for the Donetsk and Luhansk regions, in accordance with Ukrainian law, and acknowledge their special status by parliamentary resolution.
4. A pardon and amnesty for people involved in the fighting.
5. An exchange of hostages and prisoners.
6. Provision of humanitarian assistance.
7. Resumption of socio-economic ties, including pensions.
8. Restoration of full control of the state border by the government of Ukraine.
9. Withdrawal of all foreign armed formations, military equipment and mercenaries.
10. Constitutional reform in Ukraine including decentralisation, with specific mention of Donetsk and Luhansk.
11. Elections in Donetsk and Luhansk on terms to be agreed with their representatives.
12. Intensifying the work of a Trilateral Contact Group comprising representatives of Russia, Ukraine and the OSCE


 নিও নাৎসি*জম

“Minsk Agreement” চুক্তির ১৩টি শর্ত ক্রমাগত ভায়োলেট করে আসছে ইউক্রেন। একটানা ৭ বছর ধরে ওই দুটি প্রদেশের উপর হামলা চালাচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। রাশিয়া বরাবর পশ্চিমা এ্যালায়েন্সকে সতর্ক করে এসেছে। তারা কর্ণপাত করেনি। উল্টো তারা ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করতে চেয়েছে। যদিও রাশিয়ার কাছে ন্যা*টোর প্রতিশ্রুতি ছিল তারা ‘রেডলাইন’ ক্রস করবে না, বা জোটকে পূর্বাঞ্চলে এক্সপ্যান্ড করবে না। সেটা তো হয়নি। 
              এরই মধ্যে চুক্তির পর ৫ বছর ধরে ইউক্রেনে, বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলে ‘এন্টি রাশিয়া’ ক্যাম্পেইন চালিয়েছে। পুতিন যখন ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত না করার জন্য সতর্ক করেছে। তার জবাবে ইউরোপে রাশিয়ার সকল প্রকাল বিজনেস ব্লক করেছে ন্যা*টো এবং ই*ইউ। জার্মানির সঙ্গে কোটি ডলারের গ্যাস পাইপ লাইন বন্ধ করেছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ন্যাটো এবং ইউএসএ থেকে সরাসরি হেভি উইপনস আসতে শুরু করে কিয়েভে। ১৮ তারিখে সারারাত ধরে বোমা হামলা হয় দনেৎস্ক শহরে। এক রাতেই শহর ছেড়ে রাশিয়া পালায় ৪০ হাজার অধিবাসী। এর পর পরই পুতিন তার নিরাপত্তা কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে দনেৎস্ক ও লহানস্ককে রিপাবলিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গিকার করে। শরণার্থী ১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেলে ২৪ তারিখে পুতিন তিনটি লক্ষকে সামনে রেখে ‘স্পেসিফিক মিলিটারি অ্যাকশন’ শুরু করে।

১। ইউক্রেনের নিও নাৎসি*জম গুঁড়িয়ে দেওয়া।
২। স্বাধীনতাকামী দেশদুটিকে প্রটেক্ট করা। 
৩। ইউ*ক্রেনের নিউক্লিয়ার উইপনসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
ইউক্রেনে গত কয়েক বছর ধরে আর্মির চরম দক্ষিণপন্থী ফ্যাকশন গড়ে উঠেছে। তাদের নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়াতেই শংকা প্রকাশ করে খবর ছাপা হয়েছে। এই গ্রুপটির নাম-‘Azov Regiment’ ও ‘Right Sector’। ইউক্রেনের Mariupol অঞ্চলে এদের ডেপ্লয় করা হয়েছে। সেই Mariupol শহরেই রাশান আর্মি প্রথম হামলা করেছে। এই ‘নিও নাৎসিজম’ নিয়ে রয়েটার্স-এর খবর-“Azov uses Nazi-era symbolism and recruits Neo-Nazis into its ranks, Azov and Right Sector stepped into the breach, fending off the Russian-backed separatists while Ukraine’s regular military regrouped. Though, as a result, many Ukrainians continue to regard the militias with gratitude and admiration, the more extreme among these groups promote an intolerant and illiberal ideology that will endanger Ukraine in the long term. reuters, MARCH 20, 2018
ইউক্রেনের নব্য নাৎসি*জমের অনেক নজির আছে। শুধু একটি উল্লেখ করা যাক- ২০১৪ সালে ইউক্রেনের নিও নাৎসী সরকারের হিডেন স্ট্রাটিজিতে ওডেসায় গণহত্যা চালিয়েছিল নিও নাৎসীরা। ওডেসার বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন ভবনে আগুন দিয়েছিল। হত্যা করেছিল পঞ্চাশ জনের মত বামপন্থীকে। ১৭ বছরের এক কিশোর কমিউনিস্ট কর্মী ভাদিম পাপুরাকে পিটিয়ে হত্যা করার পর পশ্চিমা মিডিয়াতেও আলোড়ন উঠেছিল।

রাশান হামলার পরের পরিস্থিতি:

* গত ৮ বছরের মধ্যে এই প্রথম দুই দিন দনেৎস্কে আর্টিলারি শেল ফাটেনি।
* রাশিয়ান আর্মি চেরনোবিল পারমানবিক রিঅ্যাক্টরের দখল নিয়েছে, এবং বিস্ময়কর হলো রাশিয়ান আর্মির সঙ্গে ইউক্রেনের আর্মির এক অংশ এগ্রিমেন্ট করে যৌথভাবে চেরনোবিল পাহারা দিচ্ছে!
* ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের নাগরি*করা রাশিয়ার সৈন্য*কে স্বাগত জানিয়েছে!
* রাশিয়ান আর্মি প্রথম দিনেই ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নষ্ট করে দিয়েছে। তার পর ১১৮ টি সামরিক স্থাপনায় রকেট হামলা করেছে। তারা স্বীকার করেছে; সামরিক স্থাপনায় হামলার ফলে নিকটবর্তী বেসামরিক কিছু ক্ষয়-ক্ষতিও হয়েছে।
* মি.পুতিন ইউক্রেন আ*র্মিকে তাদের কাছে সারেন্ডার করতে বলেছে।
রাশিয়ান হামলার পর পশ্চিমা অ্যাকশন:
বাই*ডেন, জন*সন, ই*ইউ প্রধান, ন্যা*টো প্রধান থেকে শুরু করে পুরো ন্যা*টো অ্যালায়েন্স এটাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করে বলেছে-All out invasion! এর পর ব্রিটেন-আমেরিকা তাদের দেশের সকল রুশ ব্যাবসায়ীর একা*উন্ট ফ্রিজ করেছে। মানি ট্রান্সফার কোম্পানি ‘সুইফ্ট’ রাশিয়ায় কারেন্সি সাপ্লাই বন্ধ করেছে। জার্মানি গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করেছে। পোল্যান্ড-রুমানিয়া ন্যাটোর জন্য এয়ারপোর্ট ও*পেন করে দিয়েছে। রাশিয়ান টেলিভিশন R-T ব্যান করেছে ইউএস, ব্রিটেন, পোল্যান্ড, জার্মানি। ‘এ্যানি-নমাস’ কর্ণার থেকে রাশান সরকারি সাইট হ্যাকিং শুরু হয়েছে।রাশিয়ান বিমান এ্যারোফ্লতের এন্ট্রি নিষিদ্ধ করেছে।

রাশিয়ান হামলার পর ইউক্রেনের রি-অ্যাকশন:

ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট কিছুদিন আগে ২৭ টি ন্যাটো-ভুক্ত দেশের প্রধানের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর তারা কেউ ‘তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন’ ছাড়া সাড়া দেয়নি। হতাশ জেলেনস্কি এখন একা। ইতমধ্যে শ’খানেক ইউক্রেনীয় আ*র্মি রাশিয়ান আর্মির কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছে। এবং এখন তিনি বলছেন- I’m ready to nego*tiation with Russia!
পশ্চিমা মিডিয়া যে খেয়ে না খেয়ে বিষবাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে তারা যদি ফ্রা*ন্সের বিরোধীদলের নেতা, অস্ট্রি*য়ার প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী কিংবা আমেরিকার পলিটিক্যাল এনালিস্ট Lionel এর বক্তব্য প্রচার করত তাহলে বোঝা যেত যুদ্ধটা কাদের উসকানিতে কীভাবে শুরু হলো। মি: লায়নেল স্পষ্টভাবেই বাইডেননীতির সমালোচনা করে বলেছেন-“গ্রানাডার প্রেসিডেন্টকে তুলে আনা, ফকল্যান্ডে হামলা করে দখল নেওয়া, ইরাকে সাদ্দামকে মেরে গণহত্যা, আফগানিস্তানে ২০ বছরের ইনভেশন, সিরিয়া, লিবিয়া, যুগোশ্লোভাকিয়া, সার্বিয়ায় গণহত্যা করা, ইভেন সিলেক্টিভ পারসোনাল এ্যাসাসিনেশন! এগুলো যুদ্ধ নয়? ইউক্রেনে সিলেক্টিভ মিলিটারি ডেপ্লয়মেন্ট ইনঅ্যক্টিভ করতে হামলা করাটাই শুধু যুদ্ধ? ২০ লাখ মানুষকে প্রটেক্ট করতে চাওয়াটাই যুদ্ধ?
পারিপার্শ্বীকতায় বোঝা যাচ্ছে ন্যাটোর বাইরের দেশ-ইউক্রেনকে প্রটেক্ট করতে যুদ্ধে জড়াবে না ন্যাটো। আরও কয়েকদিন রাশিয়ান অ্যাটাক অব্যহত থাকলে ইউক্রেনের জনগণের ভেতরকার বিভক্তি আরও বড় হবে। তারপর মি. জেলেনস্কি নিরপেক্ষ স্থানে পুতিনের সঙ্গে সমঝোতা করবেন। পুতিনের লক্ষ্য সেটাই। তারপর অফিসিয়ালি ইউক্রেন দনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রিপাবলিক হিসাবে মেনে নেবেন। বাই*ডেন-জন*সন গং যে চিৎকার করে গলা ফাটাচ্ছেন- রাশিয়া All out invasion চালাচ্ছে। সেটা যদি সত্যি হতো তাহলে দ্বিতীয় দিনেই পুরো ইউক্রেন অকুপাইড হয়ে যাওয়ার কথা। তা হয়নি। হবেও না। পশ্চিমারা গবেষণা করে বের করেছে-‘রাশিয়া মি. জেলেনস্কিকে সরিয়ে পুতুল সরকার বসাবে। সেটা হলে ইতিমধ্যে সেই ‘পুতুল’ সিনে এসে যেতেন। তাও আসেনি। সুতরাং এর মধ্যে কোনটি ন্যায় আর কোনটি অন্যায়, সেই সিদ্ধান্ত টানার সময় আসেনি। এবং আমরা সীমারেখা টানার কেউ নই। আমরা যুদ্ধ না চাইলেও যুদ্ধ হবে। আমরা না চাইতেই ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে। আফগানিস্তানে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। ইয়েমেনে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে শত শত নারী-শিশু নিহত-আহত হচ্ছে। ফিলিস্তিনে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। কাশ্মীরে রক্ত ঝরা বন্ধ হচ্ছে না। আমাদের সীমান্তে লাশ পড়ছেই। মায়ানমারে মানুষ মরছেই। মরে যেতে পারি জেনেও ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে গিয়ে আমাদের মানুষ মরছেই..... Who can say where is peace, freedom tranquility. পৃথিবীর ‘শান্তিকামী’ মানুষ কেউই যুদ্ধ চায় না, কিন্তু নির্জলা সত্য হলো ‘যুদ্ধই পারে আরেকটি যুদ্ধকে প্রতিহত করতে’। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশ স্বাধীন হয়নি। আজকে যে তথাকথিত ‘মুক্তবিশ্ব’ ইউরোপ, জার্মান দখলদারিত্ব থেকে তাদেরকে সোভিয়েত মিত্র বাহিনীই ১৯৪৫ সালে মুক্ত করেছিল এক ঐতিহাসিক যুদ্ধের পরে। বাংলাদেশ অর্জনও সেই যুদ্ধের ফসল। আসলে যারা বলেন-‘যুদ্ধ চাইনা’, তারা নিজের বা নিজ সমর্থকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান না।

Post a Comment

0 Comments