রাশিয়া--ইউক্রেন সংঘাত (প্রথম পর্ব)

রাশিয়া--ইউক্রেন সংঘাত (প্রথম পর্ব)

ভূমিকা

২০১৪ সালের শুরুর দিকে ইউক্রেনে যে সশস্ত্র সংঘাত আরম্ভ হয়েছিল তা খুব তারাতারি অচলাবস্থায় পরিণত হয় যার ফলশ্রুতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে গোলাগোলি ও খণ্ডযুদ্ধ ছিল সাধারণ ঘটনা । কিন্তু বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এই সংঘাত বৈশ্বিক উদ্বেগে পরিণত হয় যখন ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে ফুল স্কেল সামরিক আক্রমণ শুরু করে। এই আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত অনেক বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছে, অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এবং প্রচুর সংখ্যক ইউক্রেনিয়ান পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

একনজরে রাশিয়া--ইউক্রেন সংঘাতের পটভূমি



২০১৩

২০১৩ সালের নভেম্বরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ইউক্রেনের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির ‌‌চুক্তি নাকচ করার প্রতিবাদে সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানোকোভিচের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে ইউক্রেন সংঘাতের সূচনা হয়।

২০১৪
২০১৪ সালের মার্চে রাশিয়ান সেনারা ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয় যা পরবর্তীতে ক্রিমিয়ানদের গণভোটের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তিতে পরিণত হয়।সংঘাত তুমুল আকার ধারণ করে যখন রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পূর্ব ইউক্রেনের ডনেটস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করে।এর ফলে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘাত চলতে থাকে।
ইউক্রেনে চলতে থাকা সংঘাত বৈশ্বিক সংকটে পরিণত যখন ২০১৪ সালের জুলাইতে রাশিয়ার তৈরি সারফেস টু এয়ার মিসাইলের আঘাতে ইউক্রেনের আকাশসীমায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বেসামরিক বিমান ভূপাতিত হয় এবং ২৯৮ জন যাত্রী নিহত হয়।

২০১৫
২০১৫ সাল থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও ইউক্রেন মিন্সক একর্ডের আলোকে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের পরিসমাপ্তি অর্জনে চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়।

২০১৬
২০১৬ সালের এপ্রিলে ভবিষ্যত রাশিয়ান আগ্রাসন মোকাবেলায় ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে চার ব্যাটালিয়ন সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয়।এর পাশাপাশি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এমেরিকান আর্মির দুইটি ট্যাঙ্ক ব্রিগেডকে পোল্যান্ডে মোতায়েন করা হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এরাতে এমেরিকা ইউক্রেনে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো বাড়াতে থাকে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এমেরিকা কিছু রাশিয়ান কর্মকর্তা ও কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ঐ বছর মার্চেই এমেরিকা ইউক্রেনের নিকট এন্টি ট্যাঙ্ক ওয়েপন বিক্রয়ের ব্যাপারে অনুমোদন দেয়। তাছাড়া সে বছর অক্টোবরেই ইউক্রেন ন্যাটো ও এমেরিকার যৌথ পরিচালিত আকাশ প্রতিরক্ষা অনুশীলনে অংশ নেয় যা রাশিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

২০২১
২০২১ সালের অক্টোবরে রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য ও সামারিক সরণ্জামাদি সরানো শুরু করে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি রাশিয়ান ফরেন মিনিষ্ট্রি এমেরিকা ও ন্যাটোকে ইউক্রেনে যেকোন ধরনের সামরিক কর্মকান্ড বন্ধ করার দাবি জানায়। কিন্তু এমেরিকা ও ন্যাটো তা প্রত্যাখ্যান করে।

২০২২
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে এমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ান আগ্রাসন মোকাবেলায় প্রায় ৩০০০ এমেরিকান সেনাকে ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশ পোল্যান্ড ও রোমানিয়াতে মোতায়েনের আদেশ দেন ও ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন আকাশ, নৌ ও ভূমিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন।

Post a Comment

0 Comments