কবি বেলাল চৌধুরী

 

বেলাল চৌধুরী

কলকাতায় ষাটের কবিদেরই একান্ত সহবাসী বেলাল, সতীর্থ-পরিবেশক প্রভাব  যে জীবনে ও সাহিত্যে কী বিপুল ভ‚মিকা উদযাপন করে, তা আরও একবার  প্রমাণিত হয় বেলালের কবিতায়।আবদুল মান্নান সৈয়দ করতলে মহাদেশ-এ লিখেছেন : ‘প্রায় তিন দশক জুড়ে  বিহার করলেও বেলালকে সম্ভবত ষাটের দশকের কবি বলেই চিহ্নিত করতে হয়  শেষ পর্যন্ত। কবি হিসেবে এই দশকেই তিনি পূর্ণ রূপে ও তাপে ফুটে উঠেছেন। 


কবি বেলাল চৌধুরী এর কবিতা 

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, শমসের আনোয়ার, দেবাশীষ  বন্দ্যোপাধ্যায়, তুষার রায় এঁদের কবিতার সঙ্গে বেলালের কবিতার একটি  সামান্য সাযুজ্য ও সাধর্ম আছে তা হচ্ছে গদ্যকেই কবিতা করে তোলা, ব্যক্তিগত  বহুবর্ণে স্ফুরণ ও বিস্ফোরণ ঘটানো, যে কোনো তুচ্ছ দিনানুদৈনিক জিনিসকে  কবিতায় উত্তীর্ণ করা।’ তাঁর প্রথম কবিতার বই নিষাদ প্রদেশে (১৯৬৪)। নগরজটিলতার এক ক্লান্তপ্রাণ কবি। আত্মমগ্নতায় নিপতিত। প্রতীকী তাৎপর্যে  ব্যঞ্জিত কবির কাব্যভাষা। বেলাল চৌধুরীর আবেগের মাত্রায় যুক্ত থাকে  রাজনীতি। সমাজের উন্মূল মানুষ, গ্রামগঞ্জ-পথঘাট শাশ্বত বাংলার প্রকৃতি গভীর  স্পর্শতায় ছন্দে যুক্ত হয়। কবির স্বতঃস্ফ‚র্ত অন্তর্গত অনুভূতিতে থাকে স্বস্তি ও  গৌরবের সনিষ্ট মিথিক উচ্চারণ :
একটি নিখাদ দুঃখের নির্মাণে
কেটে যেতে পারে কয়েক কোটি আলোকবর্ষ,
দুঃখ বিষম ভারি বোঝা, সিন্দাবাদের বুড়োর অধিক। 

কবির দিব্যচেতনায় সংযুক্তি, প্রধানত পরোক্ষ প্রতিক্রিয়াবাদী রাজনীতি। ফলে  শরণার্থী, শোষিত মানুষ, মৃত্যু বিশেষ প্রত্যয় পায় কবিতায়। স্বচ্ছতোয়া স্বতঃস্ফ‚র্ত  ৬৪ বাংলাদেশের সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত আঙ্গিকে উদ্গত যাবতীয় জীবন্ত সব চিত্রপ্রতীক। কবিতার রাজসিক জয়যাত্রায়  তিনি এখনও সজীব প্রাণপুরুষ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ বেলাল চৌধুরীর কবিতা  (১৯৭৩), আত্মপ্রতিকৃতি, স্থির জীবন ও নিসর্গ (১৯৭৫), স্বপ্নবন্দী (১৯৭৯), জল  বিষুবের পূর্ণিমা (১৯৮৫), প্রতিনায়কের স্বগতোক্তি (১৯৮৬), সেলাই করা ছায়া (১৯৮০), কবিতার কমলবনে, যাবজ্জীবন সশ্রম উল্লাসে (১৯৯৭), বত্রিশ নম্বর (১৯৯৭), স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল (২০০১), বিদায়ী চুমুক (২০১০) প্রভৃতি।


 

Post a Comment

Previous Next

نموذج الاتصال